হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


নির্জন 
উত্তম দেবনাথ 

বন্য দুটো পাখি খুলে হৃদ-আঁখি ছিল মুখোমুখি
নিভৃত গভীর অরন্যের শুনে নিবিড় ডাকাডাকি।
সবুজ ঘাসের দেশ অভিসার নেশায় আনমনে,
হঠাৎ শুকনো পাতার শব্দ, সব যেন শব নিস্তব্ধ।

লজ্জাবতী একান্ত গোপনে মেলে ধরেছিল নিজেকে
প্রজাপতি এসে চুমু খেয়ে কানে কানে বলে গেল
নীরবে সব কথা বলা গেলো না গো এক অদ্ভূত ভয়ে।

গভীর বনে দুটো পাখির সুমধুর সুর ভেসে এলো যেন
পৃথিবীর সব সঙ্গীত ঝংকার লেগে আছে মায়াবী সুরে।

এবার নির্জনতা ভেদ করে এলো গুলির শব্দ---

কবি উত্তম দেবনাথ 
মধ্য কামাখ্যাগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, পশ্চিমবঙ্গ 





সমাধি 
পিঙ্কি ঘোষ

তোমার ইচ্ছের মহা মিছিলে
ভাসিয়ে নিয়ে চলেছো আমায়।
আমিও দ্বিধাহীন অনুগামিনীর
মতো তোমায় অনুসরণ করেছি।
হঠাৎ পিছনে ফিরে দেখি-
শত সহস্র সমাধি।
প্রশ্ন করি, কাদের সমাধি?
তুমি নীরব, কেবলই সামনে
চলার মত্ত উন্মাদনা তোমার।
চেয়ে দেখি, প্রতিটা সমাধি
আমারই মৃত ইচ্ছের।
তোমার ইচ্ছের স্রোতে ভেসে,
তোমার ইচ্ছেদের কাছে
মৃত্যু হয়েছে আমার ইচ্ছেদের।
হত্যা করেছি আমার আধফোটা ইচ্ছে।
সমাধি ক্ষেত্রের মাঝে দেখি-
আমার ইচ্ছেদের মৃত্যু দৃশ্য,
মৃত ইচ্ছেদের চোখের জল॥

কবি পিঙ্কি ঘোষ
                  কলকাতা ৫৯, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 





কল্পনা 
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

ছুঁয়ে আছি লুব্ধক, কষ্টিপাথর 
আনন্দ দুঃখশোকে ক্ষয় নেই যার
শুধু অখন্ডতা

দু'চোখের গ্রহতারা থেকে নীলাভ শঙ্খধ্বনি
অদূরে অপেক্ষমান আমারই দুয়ারে 
মৃত পালকের উৎসর্গে পীতবাস সূর্যের ভাসান

এসেছিলাম খুঁজে নিতে অসম্ভবের রীতিনীতি 
দিনের মত ফুরিয়ে এসেছে দৃষ্টি
নিয়েছি তরলের আকার

কাশফুলের রোঁয়ার মত হাওয়ায় উড়ে উড়ে 
অন্তর্জাত জানালাগুলো খুলেছে নাকি ভেবে দেখা

মনের মধ্যে বিক্ষুব্ধ রচনার ঠাঁই
মাঝে মাঝে উঠে আসে বুকের ভিতর সম্পৃক্ত
জমা ভাবনার ফাঁপানো ঢেউ

থাকবেনা কল্পনা
দু'হাত মেলে তাই নিজেকে 
তেপান্তরে উড়িয়ে নিয়ে যাই...

কবি সৌমিত্র চ্যাটার্জী
শংকরপুর, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ



















বন্দর-বিষয়ক
অভীক মুখার্জ্জী

বন্দর জুড়ে কান্নার ফুল ফোটে
বাতাসের স্বাদ সামুদ্রিক ও নোনা
নিখোঁজ নাবিক সময়ের পথে হাঁটে
ফেরার জাহাজ রাস্তা চেনে না। 
নোঙর শুধু মৃতদেহেই মানায়
আমরা আবার মেঘ ভেঙে পথ হাঁটি
বন্দর ধূসর শূন্যতা শুধু শানায়
আমরা কেবল সমুদ্র-উৎসবে মাতি। 

কবি অভীক মুখার্জ্জী
                 আড়িয়াদহ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ







সুজিত রেজের চারটি কবিতা 

সত্য

কেউ খোঁজে না আমাকে।
আমি নিজেই নিজের নিরুদ্দেশ প্রাপ্তির                                            
খবর ছড়িয়ে দি।

কেউ বোঝে না আমাকে।
আমি নিজেই নিজেকে বোঝাই 
              তুমি মেষপালক মাত্র।

বুদ্ধ্যঙ্ক জীবনের মাপকাঠি নয় 
তাই শূন্যস্থান কখনও পূরণ হয় না।

তার চেয়ে ,ইচ্ছেগুলো জড়িয়ে ধরে                            চলো,বাঁচার রসদ খুঁজি।

আশ্চর্যচর্যাশ্চয়

জীবনের গল্প থেকে যেহেতু আমার লেখা উঠে আসে তাই সাদা তেলে আমি ভাজি না।অহেতুক উজালার অপচয় করার কোনও মানেই হয় না।

যদিও আমার ছক্কুমামা বোনাস পেয়ে পেল্লাই একটা কড়া কিনে এনে দিয়েছে। সঙ্গে ফরচুন।এখন কবিতা ঝরার মরসুম।

মিনিট দু'য়েক বাথরুমে গিয়ে বসলেই বিকট শব্দে ফ্ল্যাশ কাট হয়। দশ লি জলের এত জোর।

পাশের বাড়ির টেঁপি(ওর ভালো নাম তাপ্তী আমি অবশ্য উশ্চারণ করতে পারি না) তো এখন ধ্রুবপদী,ছাদে গেলেই জিজ্ঞাসা করে বারবার তুমি পাখনায়?কী করো?

কী করে বোঝাই ওটাই আমার সুপ্তিজগৎ--- আমার ইড়াপিঙ্গলাসুষুম্না---আশ্চর্যচর্যাশ্চয়---

টি-ব্রেক

উড়ে যাচ্ছে স্বপ্ন 
খুঁড়ে মরছি কবর

দ্রুত ছড়াচ্ছে হিংসা 
ছবি তুলছি মোবাইলে

মাছ ভাজছি ফরচুনে
জনগণ ভিজে বেড়াল

স্রোত বইছে রক্তের
পান্তা চিবোচ্ছে কবি

ফুঁড়ছি কোভি বিষ
দেবদেবীদের ইচ্ছেয়

ত্রিছটা

বলিহারি ফুসকুরি
নিষ্ঠুর মায়াবুড়ি
কুট্টুস কাট্টাস
দিঘিজলে পাতিহাঁস

বলিহারি পুঁইডাঁটা
লটপটে সাদামাঠা
জল খেলে ফুলফুলে
মাচা পেলে নভোনীলে

বলিহারি মেঘমালা
যক্ষের দূতবালা
অলকার ঠিকানায়
হেসে ভেসে উড়ে যায়

কবি সুজিত রেজ
                        চুঁচুড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ



হরিণী 
অজিত কুমার জানা 

চঞ্চল তনু মন,
আঁখিতে অশান্ত ঘূর্ণি।
কাঁপে সবুজ বন 
রক্তে ছুটে হরিণী।।

আকাশের পাড় ভেঙে,
মেঘ ঢুকে নীলিমায়।
কৃষ্ণচূড়া ঠোঁট রাঙে 
ঘুম নেই বিছানায়।।

ভালবাসার ময়দান ছুটে 
কোথা যায় হরিণী।
আঁখিতে  গোলাপ ফুটে 
কেঁদে মরে ফুলদানি।।

কবি অজিত কুমার জানা 
কোটরা, হাওড়া, পশ্চিমব্ঙ্গ




শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অণুগল্প 
অবাধ্য 

স্কুলে পড়ার সময় ঠিক হাঁটুর ওপর পর্যন্ত খাটো স্কার্ট পরার শখ হয়েছিল। মা বাবা দুজনেই না করে দিলেন। একটু বায়না করায় বাবা সোজা থাপ্পড় কষিয়ে বলেছিলেন, "এত অবাধ্য কেন? অসভ্য মেয়ে! ছেলেদের অ্যাটেনশন চাই, তাই না?"
এমএ করে একটা ছোট চাকরি পাওয়ার পর একটা ছেলের সঙ্গে ধরেবেঁধে বিয়ে দেওয়া হল। ফুলশয্যায় বর শাড়ি তোলার সময় হাঁটুর ওপর উঠতেই সহজাত লজ্জা আড়ষ্টতায় বাধা দিই। সে জোর করে। আমিও একটু জোরে চেপে ধরি। রেগে গিয়ে মারমূর্তি ধরে বলেছিল, "এত অবাধ্য কেন? ঠ্যাঁটা মেয়ে! বিয়ে করার দরকারই ছিল না, তাই না?"
তারপর একদিন অফিস থেকে ফেরার সময় চার-পাঁচজন আততায়ী আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে সর্বস্ব লুঠ করল। রক্তাক্ত করে ফেলে রাখল না, সোজা চালান করে দিল।

ঘুপচি ঘরে দু'জন ক্ষুধার্ত দ্বিপদ পুরুষ এসে শুধু হাঁটুর ওপর পোশাক তুলতে নয়, হাঁটু গেড়ে বসতেও বলে। আমি ওয়াক তুলতেই চুলের মুঠি ধরে বলল, "এত অবাধ্য কেন? বেয়াড়া মেয়েছেলে! ডাকছি হাবিবকে। মেরে বিষ ঝাড়াতে হবে, তাই না?"

লেখিকা শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
সোদপুর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ 





মৌটুসী ঘোষের মুক্তগদ্য 
প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা

তোমায় প্রথম দেখেছি আমি-
আমার অনেকটা বেশি বয়সে,তখন স্পর্শ করা গেলেও সঙ্গী করা যায় না! 
তাই তো বারংবার ছুটে আসি
তোমার কাছে- তোমায় একটু দেখবো বলে
অথবা আমাকে তুমি দেখবে বলে!
পাইন বনের আড়াল থেকে তোমায় প্রথম
একাকী দেখেছিলাম রিশপ থেকে-
খুব খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করেছিল!
রক্তিম বর্ণের,সোনালী রোদ মেখে নীল আকাশের মাঝে তোমায় অপূর্ব দেখতে লাগছিল!
শুধু তুমি আর আমি,আর আমাদের মাঝের দূরত্ব, ভোলা যায় না বলো?
মনে হয়েছিল- তাকিয়েই থাকি শুধু,
ওই যে বলে,যেখানে মায়া বেশি-সেখানে ছায়া 
থেকে যায়! 
তুমি চলে গেলে সেই মেঘের আড়ালে,
আমি আরবার খুঁজে গেলাম,পেলাম না তোমায়! 
তারপরে ট্রেকিং এ গিয়ে হাত কাটলাম-
পা ছিঁড়লাম, নখগুলো সব উপড়ে গেল আমার,
সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা পেলাম।
কাব্রু,প্যান্ডিম,কুম্ভকর্ণ,লোৎসে, মাকালু দেখলাম,
এভারেস্ট-ও দেখে নিলাম।
কিন্তু তুমি মেঘের আড়ালে থেকে একবার
দেখা দিয়েই সেই আড়ালেই চলে গেলে! 
খুব আনন্দ পাও বলো, এত লুকোচুরি খেলতে?
তা বেশ- অনন্তকালের সঙ্গী করলাম তোমায়,
কথা দিলাম সহস্রবার আসবো তোমার কাছে,
দেখি তো আমায় ফেরাও কিভাবে!
তবে, যদি কোনদিনও হারিয়ে যাই আমি,
তোমার বুকেই খুঁজবে আমায়- থাকবো আমি। 
বলে নাকি, প্রেমের ছোঁয়া বেশি পেতে নেই,
তাহলে সেই প্রেম পুরাতন হয়ে যায়।
তাই, আমাদের প্রেম চিরসবুজ ও চিরন্তন।

তাই তো বিশ্বকবি বলে গেছেন-

“আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালবেসেছি, অসংখ্যবার ভালবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়।”

গদ্যকার মৌটুসী ঘোষ 
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, বর্ধমান 


ছবিঋন- মৌটুসী ঘোষ 











মাইলফলক 
লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরা

মাইলফলক গুলো ছুটে আসছে 
জিরো পয়েন্টে একা আমি,
পিছনে গভীর গিরিখাত।
পৃথিবীর পথে ক্লান্ত পথিক, 
এতদিনের দেওয়া নেওয়ার
হিসাব-নিকাশ রাখছিলাম
অনুচ্চারিত শব্দে অনন্ত নীরবতায়।
কিছু মনগড়া সংখ্যা 
ছুঁড়ে ফেলতেই শুরু হলো দৌড়।
কাঙ্খিত হাত মাথার উপর উধাও আজ।
নিঃশব্দে কোলাহলে ডুবতে ডুবতে
ক্রমশঃ ভুলে যাচ্ছি জীবনের চুক্তি।
শকুনের উড়ে যাওয়া ছায়ায়
ছুটতে ছুটতে হয়ে গেছি
মাটির পৃথিবীতে আমি এক মাইলফলক।

কবি লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরা
সুকান্তপল্লী, কালনাগেট, পূর্ব বর্ধমান
























বিশ্বাস 
চয়ন কুমার রায় 

প্রগাঢ় নৈঃশব্দের ও গভীর অন্ধকারে
নিমজ্জিত, নৈরাশ্যের মাঝে
প্রাণের সন্ধানে ফেরো, অন্তহীন প্রত্যাশায়।
অনাদি কালের বাণী কান পেতে শোনো
ঊষর প্রান্তর আর নিশ্ছিদ্র শিলাভূমিতেও
জীবনের অঙ্কুরোদ্গম অসম্ভব কিছু নয়।
জীবন- প্রদায়িনী স্রোতস্বিনী কুলু- কুলু রবে
আশার সঞ্চার করে এক বার্তা দিয়ে যায়,
সব জঞ্জাল মুক্তকরো, সব পাপ ধুয়ে ফেলো।
পৃথিবীর গভীর অসুখ এখন আরো গভীরতর ,
বিবর্ণ প্রভাত ধীরে ধীরে উজ্জ্বলতর হবে
বিশ্বাস দীপ্ত বজ্রমুঠি ঊর্ধ্বে তুলে ধরো।

কবি চয়ন কুমার রায় 
টিকরহাট, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ






































রাগীব আবিদ রাতুলের তিনটি কবিতা 

সংসারে সন্ন্যাসী

অনন্ত সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উঠেছি একা হতে,
আলাদা হয়েছি যখন সব কোলাহলে,
সেখানেও পিপড়ার চুপিসারে চলা–রাতে
সবই হয়ে যায় ম্লান,
সব ভিড়ে কি আর হারাতে পেরেছি তাকে।
রাস্তা পারাপারে কুকুরেরাও সজাগ থাকে,
আমিও ছিলাম সেখানে,পারিনি তো ভাবনায়
বাতাস হতে,
বেঁচে যেতে চাই আমিও সব মৃত নদীর বেশে।
দোকানের ভেতরে শুধু লোভ দেখে যাই,
মানুষেরে বাঁচাতে,সপ্ন দেখাতেই কি
এত দোকানের সাজ,এত আলোকসজ্জা,
তবে কি নাই মানুষের নিজস্ব আলো, 
সব আলো ফুরিয়েছে কি তবে।
রাতের রাজপথ এখন আর নির্জন সুন্দর নয়,
তবে এখনো রয়েছে নির্জন কিছু মানুষের নিঃশ্বাস, 
শহরের ভেতর খুঁজে যায় তারা পুরনো কিছু গাছ,কিছু নিজস্ব রাস্তা, ব্যক্তিগত চাদের আলো, 
সবই হারাতে হারাতে তাদের চামড়াও হয়েছে 
ভীষণ পুরনো। 
সংসারে যে ভুলে জন্মেছে সন্ন্যাসী, 
কে পারে আটকাতে তাকে,
তবুও তো তাকে থেকে যেতে হয়,
মেনে নিতে হয় দোকানের লোভ,পোষাকের আবরণ,সতর্ক পকেট।
এভাবেই বেঁচে যেতে হয় প্রতিনিয়ত। 

চোখের জল 

চোখের জল কান্নায় মেশে না অনেকদিন,
জল কখনো রুম সিলিংয়ের ধাঁধায় মেশে,
বাসার ছাদে,পিলারে হেলান দিয়ে আটকে যায়,
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পায়ের নীচে, 
কখনো দৈনন্দিন স্রোতের আঘাতে তলিয়ে যায়।

কোলাহলের ভেতরে কিছু পরিচিত শব্দে ;যদিও ফিরে আসে,
আমিই তখন ঢোক গিলে গ্রাস করি জল,
কখনো আটকে যায়,আমার চোখ লাল হয়,
লাল চোখের ভয়েই হয়তো তা থেমে যায়।

চোখের জলে অন্য কেউ থাকে,
চোখের জলেই অতীত নামে নীরবতায়,
কোন পুরনো দৃশ্য ফিরে আসে,
একটুখানি ছোঁয়া থাকে অবহেলায়।
তবুও চোখের জল কান্নায় মেশে না অনেকদিন।

অমলিন দুঃখ

স্কেলের রেখা ধরে ধরে সম্পাদ্য সকল নিখুঁত হতে চলেছে,
যেভাবে নিখুঁত ভাবে সুখ খুঁজে চলো তোমরা,
দুঃখ তো মাপজোখের বিষয় না তোমাদের কাছে,
বাড়িতে প্রবেশের পরে যে তোয়ালে হাতে আসে,
যার গায়ে মাখো সারাদিনের ব্যস্ততা আর ক্লান্তির ধুলো, 
দুঃখ তেমনই আমার কাছে অমলিন সুন্দর,
এক ফোটা জল কানের লতি ছুঁয়ে,
কাঁধে এসে পড়তেই দুঃখের কথা মনে পড়লো।
তোমাদের দুঃখের কথা এখন কেবলই
দোকানের আবদারে, দুঃখ তোমাদের
অনাদর আর আফসোসে।
আমার দুঃখগুলো তোমাদের মতো নয়,
দুঃখগুলো একটা সারসের, ঝিলের পানির ধারে বসে থাকা দুপুরের মতো। 

কবি রাগীব আবিদ রাতুল
ঢাকা, বাংলাদেশ














































স্নান-দৃশ্য
মুক্তি দাশ 

নীল রং সব উধাও! আকাশে
মেঘেদের সে কি কম ভীড়!
গর্জন শুনে বেশ বোঝা যায়,
আকাশ বড়ই গম্ভীর।
রিম-ঝিম-ঝিম টাপুর-টুপুর,
বৃষ্টি কত না ছন্দে!
ভরদুপুরে‌ই ঘনালো আঁধার-
ভ্রম হয়, বুঝি সন্ধে!
পাখপাখলিরা ভিজেই একশা-
সাড়া নেই, বুঝি গাঁ-ছাড়া!
উঠোন-নদীতে কাগুজে নৌকো
ভাসিয়েছে কচি-কাঁচারা।
স্নানঘরে যেন শাওয়ারের নিচে 
চানে রত সারা বিশ্ব-
মনের গভীরে গাঁথা হয়ে থাক
এই অপরূপ দৃশ্য!

কবি মুক্তি দাশ 
১৩৫, অঘোর সরণী, রাজপুর, কলকাতা




















হাত 
ইন্দ্রাণী পাল

এবছর যত চেনাজানা আছে সব শেষ হবে।
আমরা আবার আদিম হাতের স্পর্শে
                                                        জেগে উঠবো।

শরীর জুড়ে আলোর উৎসব---
তোমাদের সঙ্গে এখনও দেখা হল না
এ বছর শীত নামবে খুব তাড়াতাড়ি।

কবি ইন্দ্রাণী পাল
জনাই, হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ 






যদি ফিরে আসি 
দীপক বেরা 

যদি ফিরে আসি আবার
প্রবহমান গঙ্গা-পদ্মা খরস্রোতা হবে
দু'পারের পলি-বিধৌত মাটি উর্বর হবে আবার। 

যদি ফিরে আসি আবার 
রিক্ত-জীর্ণ পাতায় ক্লোরোফিল ঢেলে 
এঁকে দেব ক্যানভাসে সবুজ আদিগন্ত চরাচর।

যদি ফিরে আসি আবার 
নেশাগ্রস্ত নিশাচর রাতের ভয়াবহতায়
শুষে নেব সন্ত্রাসের বিষাক্ত বারুদগন্ধ বাতাস। 

যদি ফিরে আসি আবার 
জলফড়িং প্রজাপতির রঙিন ডানায়
এনে দেব বনবীথিকায় ফাগুনের বসন্তবাহার। 

যদি ফিরে আসি আবার --
কেড়ে নেব মুখোশ, এই দূরত্বের বসবাস 
এনে দেব চোখ, যে চোখে ভেজে কবিতা 
যে চোখে আছে ঘুম, সৌখিন স্বপ্নের আকর! 

  কবি দীপক বেরা
   হরিদেবপুর, টালিগঞ্জ, কলকাতা




















সুদীপ্ত বিশ্বাসের তিনটি কবিতা 

বাক্যহারা ১

রাতদুপুরে আসছে উড়ে একটা দুটো স্বপ্ন পাখি
হারানো সেই সোনালি দিন, এখন একে কোথায় রাখি!
আবছা আলোয় চমকে দেখি সেই যে তুমি মেঘের মেয়ে কলসি নিয়ে দুপুরবেলা একটু দুলে ফিরছ নেয়ে
হাল্কা রঙা কল্কা শাড়ি,দুলছে বেণী ইচ্ছেমত স্তব্ধ চোখে থমকে থাকি,আরে এটাই সেই ছবি তো!
সেই যে যেটা হারিয়ে গেছে একটুখানি অসাবধানে
আজ পুরোটা রাখব ধরে,আজকে লিখে রাখব প্রাণে।
গভীর রাতে আবছা আলো, হতেও পারে চোখের ভুল
বলো না তুমি সত্যি করে,তুমি কি সেই টগরফুল?
যাচ্ছে খুলে স্মৃতির পাতা,ডাগর চোখে দেখছি খালি
অরফিউস ও ইউরিডিসি, বুদ্ধদেব ও আম্রপালি...
স্বর্গ বুঝি আসল নেমে আবছা আলো ঘরের কোণে
না বলা কথা অনেক ছিল পড়ছে না যে কিছুই মনে।
হঠাৎ দেখি কাঁদছ তুমি, তোমার চোখে অশ্রুধারা
তোমার মুখে আমার ছায়া আনন্দেতে বাক্যহারা।

বাক্যহারা ২

বুঝতে পারনি বুঝতে চাওনি বলে,
সুরের ইশারা ক'জনে বা বলো বোঝে?
কত কত মেঘ রোজ চলে যায় ভেসে
অবুঝ মনটা তবুও তোমায় খোঁজে।


নদী ছুটে চলে, মেঘেরাও ভেসে যায়-
পাহাড়ের থেকে ঝর্ণারা এসে নামে,
তবু একা একা বিষন্ন সন্ধ্যায়
না বলা কথারা থেকে যায় নীলখামে।


গুমরে গুমরে এ কেমন বেঁচে থাকা?
চারদিক জুড়ে নীরবতা, গিরিখাত
সময় চলেনা, থমকে থেমেছে চাকা,
ঘিরে ঘিরে ধরে অমাবস্যার রাত।


ভাঙা ডানা নিয়ে তবুও তো পথ চলি,
শীতের বিকেলে ক্লান্ত রোদের মত
বিষাদ রাঙানো নদী আর কানাগলি,

দিগন্ত জুড়ে মন খারাপের ক্ষত!

বাক্যহারা ৩

অবলা কথারা আটকে রয়েছে চোখে

অবুঝ মনের বোবা কান্নার মত
আজকে এখন পাথর চোখেতে শুধু
হারানো আবেগ পুরানো দিনের ক্ষত।


বুঝলে না কিছু বুঝতে চাওনি বলে
সুরের ইশারা সুরকার শুধু জানে
দূরের বাতাস দূরে চলে যায় আরও
মন শুধু বোঝে হারানো গানের মানে।


এসেছিল যেটা একদিন নিঃশব্দে
বাতাসেও ছিল চুপিচুপি আসা যাওয়া
রূপকথা দেশে হারানো বিকেলগুলো
সবটাই যেন মিথ্যে অলীক মায়া।


জীবনের খাতা ভাসানোর পর পর
দুচোখ ভেজায় অঝোর অশ্রুধারা
অল্প দুঃখে সশব্দে কেঁদে ওঠে

গভীর দুঃখে ঠোঁটেরা বাক্যহারা।

কবি সুদীপ্ত বিশ্বাস 
রানাঘাট, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ


























নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates