হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


রিসাইকল বিন
অসীম বিশ্বাস 

উফ্ আর পারি না !
ল্যাপটপে গোঁজা মাথাটায়
মেমোরি প্রায় ফুল,
অফিসের ওয়ার্ড ফাইলে
জীবন যেন পদ্মপাতায় জল!
প্রিন্টারের কালো কালিতে
ছাপা বিবর্ণমুখ !
উইন্ডো'টা খোলা আছে,
এক ঝরোখা মিষ্টি হাওয়া-
আসে ঐ পথেই।
কি-বোর্ডে আঙুলের আলতো ছোঁয়ায়
ভেসে ওঠে স্ক্রিনে সিক্ত উষ্ণ অধর।
গলায় লিপস্টিকের দাগ
হাই লাইট হয়,
ভেজে মন, ভেসে ওঠে প্রেম।
সিপিইউ'এ তখন
প্রাপ্তির নীরব প্রত্যাশা,
পাসওয়ার্ড দিতেই
সাগর পারে আছড়ে পরে ঢেউ প্লাবিত হয় বাসনাগুলো।
গুটি পায়ে নোনাজল পেরিয়ে
আসে ভার্চুয়াল প্রেম সি-ড্রাইভে;
হৃদয়ের অতলান্তিক গভীরে
বাবুইয়ের মত বাসা বোনে,
ঠাঁই করে নেয়
এন্টি ভাইরাস ফাইলের মত।
সারভারে পুঞ্জীভূত হয় প্রেমিক মন
ঈশান কোনে জমে ওঠে মেঘ,
বৃষ্টিধারায় ভিজতে থাকে
প্রেমিকার স্তন আর নাভি।
তৃষিত প্রেমিক অনুভব করে
ওয়ান জিবি সম্ভোগের তৃপ্তি
নীল জোছনায় ।
প্রেমের অস্তিত্ব আকাশ প্রদীপ হয়,                          জ্বলে অবকাশে।                                                      সুখ হারায় রিসাইকল বিনে। 


কবি অসীম বিশ্বাস 
খারগড়, নভি মুম্বাই, ভারত 

                               

















অনিন্দ্য দত্ত'র দুটি কবিতা 

নশ্বর ১

সময়ের সূক্ষ দাগ পড়ে
সুন্দরের মুখের উপরে 
একলব্য শিষ্য তার
অবিরাম ধনূর্বিদ্যা অভ্যাস করে
তরুশ্রেণী মেলে পাখা
ভোরের বাতাস হানে চুম
সতত কুন্ডলীকায় প্রাগূষার
আধোভাঙা ঘুম
প্রত্যুষের হিমনীলে,নীরব,নিঃঝুম।
তেল পোড়ে অবিরাম,নিরন্তর উন্মাদ নাচে রাধা
জীবিতের,জীবনের তীক্ষ অক্ষরতালে বাঁধা 
বাঁধা পড়ে স্বর্গ মর্ত্য 
বাঁধা পড়ে চতুর তস্কর 
আরব্য সাগর তীরে 
পুড়ে যায় জীবন নশ্বর

নশ্বর ২

পেনসিলের শুভ্রমুখে
সূচিমুখ যন্ত্র এক
কেটে চলে সূক্ষ,তীব্র এক শিষ
সাদা কাগজের নিঃস্বতায়
ধায় যেন লাঙলের ঈষ।
বেদ কার মুনিগন
কয়েকটি নিরেট
বলেছিলেন ঈষের সাথে দিবানিশি 
করো বাস
অল্প আঁচে সেঁকে নিও
বলদের ঘি মাখানো পাশ
বলেনি নির্বোধ তারা
একটেরে খাটে শুয়ে
রাত্রিভর,ব্যক্তিগত রকেট ওড়াও
পেনসিল অরণিতে ঘষে ঘষে 
নশ্বর জীবন পোড়াও

কবি অনিন্দ্য দত্ত 
পূর্ব নয়গাঁও, থানে, মুম্বাই
























রবি চরণে
বিমল মণ্ডল 

আজও তুমি চোখ বুজে অধোমুখে
তুমিহীন এই পৃথিবীর ব্যস্ততার মাঝে 
সারি সারি শবের চিতার কিনারে কিনারে
তোমার প্রতিক্ষায় শব্দের সংগোপন 

রক্তাক্ত নক্ষত্রের নীচে আমাদের ভুল ক্যাম্পাস 
যেখানে অসীমের অনাবৃত হলঘরে 
উপভোগ করি কয়েকটি বারমাস
তোমার কবিতার পরে,তোমার গানের পরে,তোমার ছবির পরে... আরও কত কত সব...

আজ টিকটিক করে ঘড়ির কাঁটা 
সময়গুলো সমুদ্রের মতো উপভোগ্য ব্যথার 
মানুষের  জীবনে - শান্তি, প্রেম,ক্ষমা 
এত কাছে তুমি দিলে প্রগাঢ় সৃজন সহিষ্ণুতা 
তারই পরে নৈবেদ্য সাজাই
গান গেয়ে তোমারই চরণে।

কবি বিমল মণ্ডল 
                 কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
























লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরার চারটি অণুগল্প 

হিমু

ধড়াম করে বার দরজাটা খুলেই একুশ বছরের টগবগে দেবেশ মাথায় গামছাটা বেঁধেই মোল্লা পাড়ার দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট।
-আগুন আগুন তারস্বরে শুধুই চিৎকার। 
ধোঁওয়ায় আটকে পড়া রহিমের বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ।ভয়ার্ত এক বিভীষিকা পরিবেশ।
কোনো কিছু না ভেবেই দেবেশ গামছাটা মুখে বেঁধেই আগুন মাড়িয়ে পাঁজা কোলে করে রহিমকে বাইরে এনেই অজ্ঞান।এখন ওরা দুজনেই হাসপাতালের একই বেডে।ওরা এখন নার্স দিদিদের হিমু ভাই।

ঘুম

মাঘের জাড়।মুখে হু হু,ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বৃদ্ধ বুদ্ধবাউরী হাত ঘষতে ঘষতে ঘরে ঢুকে দেখে মা মরা ন্যাওটা নাতি হাঁদু এখনও ঘুমায়নি। খড় পাতানো বিছানায় হাঁদুকে কাঁথা বস্তা ঢাকা দিয়েও কিছুতেই ঘুম পাড়াতে পারলো না। 
-- দাদু!জাড়ই ভাঙছে না তো ঘুমোবো কি!
--দাঁড়া শালা জাড়কে মজা দেখাচ্ছি বলে আগড়টা ভালো করে আটকে মেঝেতে পাতা কয়েক আটি খড় মেঝের কোনে জ্বালিয়ে একটা বিড়ি ধরাল। 
--শালা এইবার? বলেই শুয়ে পড়ল।
জাড় ভাঙলো বটে কিন্তু ঘুম ভাঙলো না।

অগ্নিশিখা 

লালে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছটায় কুড়ুলের ঘা পড়তেই  হরিহর বাবুর গর্জন-ওখানে কোন মতেই মোবাইলের টাওয়ার বসবে না। দুই ছেলের অমনি প্রতিবাদী চিৎকার-তোমার তো একটা চাকরি করে দেবার মুরোদ নাই যেই আমরাএকটা কাজের ব্যবস্থা করলাম আর অমনি বাধা।সরে যাও,তুমি তোমার 
প্রকৃতি প্রেম ও আদর্শ নিয়ে থাকো।দুভাই মিলে বাবাকে আটকায়।গাছ কাটা পড়ে।চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মা দেখে কৃষ্ণচূড়ার অগ্নিশিখায় যেন ওদের বাবার চিতা জ্বলছে। 

বন মহোৎসব 

এ বছরেও ধুমধামে বনমহোৎসবের আজ উদ্বোধনী।মাইক বাজছে।বিশিষ্টজনদের এই দিনের তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা।এ পাড়ার বুড়িমা যথারীতি এক ঘটি জল একটি চারা গাছ হাতে নিয়ে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।মাইকে মন্ত্রী মশাইয়ের শুভ বৃক্ষরোপনের কথা ঘোষিত হলো।
বুড়িমা কাঁপা কাঁপা গলায় মন্ত্রী কে বলে-না, না বাবা ওখানে নয় এইখানে। প্রতিবছরই তোমার মতো মন্ত্রীরা এসে এই খানেই চারা লাগায়।
মন্ত্রীমশাই অবাক স্বরে বলেন-তাহলে আগের বছরের গাছগুলো কোথায় গেল? 
কেন বাবা! আগের বছরগুলোকে কি তুমি ধরে রাখতে পেরেছ? তেমনি গাছগুলোকেও ধরে রাখা যায় নাই- বলেই বুড়িমা চারাটি মন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়।

সাহিত্যিক লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরা
সুকান্তপল্লী, কালনাগেট, পূর্ব বর্ধমান



















 
       
             
             
           





ঈশ্বর,তুমি সব জানো
পার্থ সারথি চক্রবর্তী

ঈশ্বর, তুমি সত্যিই সব দেখতে পাও!
তুমি দিগন্তে এঁকে দিয়েছিল-
একফালি চাঁদের মত এক টিপ
মায়ের ছেঁড়া আঁচল দিয়ে ।
ধুলোর সাথে কখনো ভেসে আসে 
        পোড়া মনের গন্ধ  বা
        পোড়া দেহের দুর্গন্ধ!
ঈশ্বর, তুমি সব শুনতে পাও!
প্রাণখোলা অট্টহাসির সাথে,
        মিশে যায় চাপা কান্নার রোল 
কোন হাত ছুঁতে পারে না-
        ভেজা চিবুক, দগ্ধ মন।
ঈশ্বর, জানি তুমি সব দেখতে পাও !
ঈশ্বর, তুমি সব শুনতেও পাও!
রোদের চিৎকারে মুহূর্তে বদলে যায়, 
      আকাশের রং, শ্বাসের গতি
নির্লজ্জ দাবদাহে শুকিয়ে কাঠ হয়
      ধমনীর রক্ত, কপালের জলপট্টি
শ্বাস-প্রশ্বাসের ভান ক'রে ছেড়ে চলে
      অসহায় দীর্ঘশ্বাস, হা-হুতাশ 
ঈশ্বর তুমি নিশ্চয়ই সব বুঝতে পারো!
ভাঙ্গা আয়নায় যে প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে 
তার শপথ নিয়ে চলা বহুদূর -
মাইলের পর মাইল,  বা আরো বেশি 
বদলে যেতে থাকে মাটির রং, আকাশের ছটা
বদলাতে থাকে সিরিয়ালের প্লট, 
তুমি সব দেখেই যাও!

কবি পার্থ সারথি চক্রবর্তী 
কোচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ


















লাশ
সোমনাথ বেনিয়া 

নিরাময় একটি হোমের সর্বময়কর্তা। সেই হোমের কেয়ার টেকারের নাম প্রফুল্ল। হোমটা অনাথ মেয়েদের নিয়ে তৈরি হয়েছে। তাদেরকে আত্মনির্ভর করাই নিরাময়ের লক্ষ্য এবং এই কাজে সে যথেষ্ট সফল। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান আসে এবং তা পরিমাণে যথেষ্ট। এটা প্রফুল্ল জানে। প্রফুল্ল এটাও জানে যে হোমের দু-জন মেয়ে টাকা-পয়সার হিসাব রাখে এবং বছরের শেষে নিরাময়কে সমস্তটা বুঝিয়ে দেয়। 
     
একদিন বিকেলে নিরাময় হোমের ছাদে উঠে দেখে দুটো মেয়ের লাশ পড়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি প্রফুল্লকে ডাকে। লাশ দুটো দেখিয়ে নিরাময় বলে, "তুই এদের মেরে ফেললি। তোর কীসের অভাব ছিলো যে এদেরকে তোর সহ‍্য হলো না।"
"বাবু, আমি তো এদের মারিনি। এদের উপর আমার কেন লোভ থাকবে। কোনোদিন কিছু দেখেছেন কি?"
"তাহলে মরলো কী করে!"
"আমিও তাই ভাবছি। এখন কী হবে বাবু?"
"কী আবার হবে আবার! দুটো গাঁদা ফুলের নতুন চারাগাছ টবে লাগাতে হবে। ওই দুটোকে ফেলে দে। তুই তো জানিস এই সাজানো বাগানের ফুলের গাছগুলো আমার হোমের মেয়েদের মতো ..."

সাহিত্যিক সোমনাথ বেনিয়া
নিমতা, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ




















উত্তম কুমার মণ্ডলের কবিতা 
জীবনের ক্যানভাস

কোন তুলিতে, কোন রঙে, কোন সরল বা বক্র টানে আঁকি এই অজানা আকাশ। যার দিকে চেয়ে চেয়ে দিন যায়। চাহিদা আর অপ্রাপ্তিতে ছেয়ে থাকে ধূসর ক্যানভাস। ঘোর কাব্যিক মোড়কে উন্মত্ততা আসে কদাচিৎ। কবিতার ছোঁয়া তবু অধরা হাতে। কী চাই... কী চাই... পা রাখি চলন্ত সিঁড়িতে। নিঝুম পাখিটি পাশে প্রহর গোনে নিবিড় ছায়ায়। সিঁড়ি ছোটে... পা ছোটে... দৃষ্টি হারায়। দৃশ্যপট আটকে থাকে ধূসর বন্ধুরতায়। জীবনের ক্যানভাস শেষ হয় অসমাপ্ত তুলির টানে...!

কবি উত্তম কুমার মণ্ডল 
                কুঠিবাড়ি, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগণা 

















নিয়াজুল হকের কবিতা 
বিস্ময় প্রকাশ 

আমরা ভুলে যাই 

মানুষের ভেতরেও অধস্ত্বক থেকে 
কঠিন পাথরের জন্ম হয় 

তার আত্মপ্রকাশের আগে 
আমরা জন্মতিথিহীন উদাসীন থেকে যাই 

শুধু পাহাড়-পর্বত এবং 
হিমালয়ের সামনে দাঁড়ালে 

আমরা বিস্ময় প্রকাশ করি

কবি নিয়াজুল হক 
বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়া, ক্ষুদিরাম পল্লী, পূর্ব বর্ধমান 




অলৌকিক শরীর 
সুপ্রভাত মেট্যা

ক্রমশ বিকেল,ঠান্ডা লাগিয়ে গুটিয়ে নিচ্ছে আলো।
অল্প সময় কথা হচ্ছে।হলুদ রঙে ধুলো পায়ে ম্লান বালক ফিরে আসছে,ধূসর লোক এবং রাস্তা সম্বন্ধীয় চুপ ক্রমশ বাড়ছে,সম্পর্কহীন,স্পর্শশূণ্য...

হারিয়ে যাচ্ছে আলো।
বালিকা মেয়ে কম্প হতে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ঠাকুর নম করছে। পড়া - বই এগিয়ে আসছে দাওয়ায়।

এখন শীতকালীন সময়। 
রাত্রি নেমে এলে, দেওয়াল একটা কাপড় তোমার ঘর--শরীর, খোলা আয়নায় আগুনের গল্পে কথা বলে, নীল...
কুয়াশা ঘন,ঘোর রহস্যের গোপন অন্ধকার খেলে বেড়ায় তোমার অলৌকিক শরীরে কোথাও...

কবি সুপ্রভাত মেট্যা
বলরামপুর, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর 





শুভজিৎ দাসের অণুগল্প 
তাৎক্ষনিক

"আগুন্তুক আগুনের অঙ্গার গুলো এখনো জ্বলে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে লড়াই করে যাচ্ছে জলের সাথে তার শেষ স্ফুলিঙ্গ দিয়ে।"

নিউজ চ্যানেলের কভারেজ এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে,দমকলের আরেকটা ইঞ্জিন এসে গেছে হাওড়ার নিকটবর্তী একটি চটকল লাগোয়া বস্তির নিভে আসা লেলিহান অগ্নিশিখার তেজ মেটাতে,যা কিছুক্ষন আগে তজনজ করে দিয়েছে বস্তির অধিকাংশই,ঢলে আসা শেষবেলায় অবশিষ্ট কিছু আছে কিনা তা দিয়ে সম্বল করে নতুন করে আস্তানা খোঁজার তাগিদে এগিয়ে চলেছে গননার খাতার কিছু আবেগ মাখা মৌলিক সংখ্যার মানেরা।তাদের বুকে বল বলতে প্রশাসনিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস টুকু! শেষ বেলার আপাতত শেষ রিপোর্ট" আগুন বর্তমান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে,ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সামান্যই কিন্তু হতাহতের কোনো খবর নেই।

চৌরাস্তার লাগোয়া চায়ের দোকানে খবরে কাগজ পড়ছে কিছু মানুষ,কাগুজে দৃষ্টিতে আপাতত সামান্য অগ্নিসংযোগের খবর নিয়ে হাহুতাশ তর্ক - বির্তকও চলছে মৃদু আঁচে,চায়ের দোকান লাগোয়া ফুটপাতের নতুন সদস্যরা শুনছে আর শিহরিত হচ্ছে,উদাস হচ্ছে নিয়তির পরিহাসে। তাদের কিশোর ছেলেটা ভাবছে - ফুঁসছে উওর খুঁজে চলেছে নিজের মনের অন্তরালে জগতের মায়ার,ঈশ্বরের;যার মহীমার গল্প ছোট থেকে শুনে আসছে,আর নানা কুন্ডলীকৃত ধোঁয়াটে ভাবনার বয়ঃসন্ধিকালের উন্মুক্ত মস্তিষ্কে।অযান্ত্রিক চোখে সে ভাবছে আর চেয়ে দেখছে রোজকার সেই রাস্তাকে যা সে রোজ দেখে কিন্তু আজ দেখছে তাকে আরো স্থায়ীভাবে স্পষ্টভাবে,তারপর একবার চোখ গেল রাশি রাশি ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে আকাশময় কালকের মতন কিন্তু অতটা গাঢ় কালো নয়,তারপর দূরন্ত কিছু পথিকদের ছুটে চলাকে,তারপর চোখে এল একটা ছোট্ট মন্দির দেখেই চোখ ঘুরিয়ে নিল ঘৃনাভরে,হঠাৎ চোখে পড়ল একটা বড়ো একটা সুন্দর স্নেহ মাখা স্নিগ্ধতা শোভনীয় মুখ চেয়ে আছে তার দিকে,আপাত দৃষ্টিতে মনে হল তার,তার ওই কিশোর দৃষ্টিতে;সে চেয়ে থাকল হা করে মুগ্ধ হয়ে।

দেখতে থাকল রোজ হা করে মনে ভরে আপাতত তার সাথে ওর কোন কথা হয়নি,তাকে দেখেই মনের পুলক সে ভরিয়ে নিত, এই মগ্নতার জন্য অবশ্য তাকে অনেক কাঠখোরও পোয়াতে হয় সেদিন মা এর কাছে এক চড় খেতে হল এটা অবশ্য তাদের জীবনে নতুন নয় তবুও তার বিরহ ভঙ্গের কারণে তার ভিতরে রাগও হয়,সেদিন নতুন চায়ের দোকানে মালিকের কাছেও খেল সজোরে এক লাথি,তবুও মেনে নিতে হয় সেই মালিকই তো এখন ওকে খাওয়াচ্ছে তার বদলে কিছু কাজ করতে হচ্ছে দুনিয়ার গতানুগতিকতায়।

আবারও আগুন্তক লেলিহান অগ্নিশিখা জ্বলে উঠেছে, বয়ঃসন্ধিকালের বিরহের ভাঙনে;সে কাতর চক্ষুতে চেয়ে আছে সেই বিজ্ঞাপনের দিকে যেখানে কালকে পর্যন্ত চেয়ে ছিল স্বাপ্নিক রাজকুমারী,আজ তার বদলে অন্য কোন দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ঢেকে দিয়েছে । আজকে আবার তাকে ভাবাল এই তাৎক্ষনিকভাবে গোটা জগতের মায়াবীকতাকে হঠাতই চড় তার শীর্ণ গালের উপর আছড়ে পড়ল, তার মা এই কান্ড মাঝেই মাঝেই করে থাকেন তাই তার এটা গা শোয়া তবুও তার তাৎক্ষনিক ভাবনার জাল ছিন্ন করতে বাধ্য হতে হল,তাৎক্ষনিক ব্যাথাকে গায়ে মেখে।ছুটে চলল মৌলিক সংখ্যার ন্যায়ে জীবনের ধারাবাহিকতায় একটা বিহরিত কিশোর ।

লেখক শুভজিৎ দাস 
শেওড়াফুলি, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ 
















কবিতার বর্ণহীন মানুষেরা
নিমাই জানা 

অমনোনীত কবিতাকে টেবিলের ওপর ডিসাকশানের জন্য রাখলাম

অয়েল পেইন্টিং এর চারা গাছ গুলো বেড়ে উঠছে তরতর করে
বেহালা বাদক আমার সব ইতিহাস জেনে নিয়েছে আনফ্রেন্ড কলে
নিশুতি চ্যাটিং করতেই আমার নাম ভেসে উঠল মৃত মানুষের পাশে , চোখটি কটকটে লাল

আমি কি তাহলে বারানসীর ঘাটে কাউকে  পোড়ালাম কাঠের অভাব সত্ত্বেও
অথচ গঙ্গার ঘাটের নিচে কেউ পা ঝুলিয়ে যক্ষা রোগের অস্থি নিমজ্জিত করল
অর্জুনগাছ আমাকে সান্তনা দেয়
এই তো দেখো কয়েক মিলিমিটার দূরে পান্থপাদক রোপণ করেছি জমাট মাংসপিন্ডের জন্য , ভুল করে যাকে সবাই বৃত্ত বলো

শিরাবিন্যাস গুলো কেমন যেন পাখির মতো উড়ছে
তুমি তার কাছে যাও সে তোমাকে নীলকন্ঠ পাখির একটি হেরো চেহারা দেবে
নিরক্ষীয় স্নানের মৃত সন্তানেরা এবরশানের সব গোপনীয়তা জানে
অগাধ প্রশ্ন বিচিত্রায় তুমি শুধু পাতাবাহার রোপন করেছ কচুরিপানার প্রবাহে
আমাকে কোনদিন একটি বিষের বোতল দাও নি

যাকে ভুল করে খেয়ে শান্ত হয়ে যায় সকল প্রাণী অথবা পুনর্জীবন ঘটে নিরাময় সদনে
তিন ফুট দরজার কাছে সবাই বর্ণহীন 

কবি নিমাই জানা
রুইনান, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর















অনাবৃষ্টি 
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

মিথ্যে খরায় শেষ 
কবর থেকে উঠে আসা জীবন
এইটুকু আশা 
বৃশ্চিকের তাপে গলে যায়, 

বর্ষার জল দেখেনি উত্তরণ
শোনেনি হংসধ্বনি স্বচ্ছ জলাশয়
স্পর্ধা ছিল না অভিমানে 

নরকের পথ অবনত 
বাষ্পজালে ঘেরা আকুতির কাছে,
পৃথিবীর থেকে জলীয় দূরত্বে 
মাটির উপরে থেমে থাকা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছায়া 

অনাবৃষ্টির প্রথাগত আয়নায় 
মেঘবৃষ্টির পক্ষ বিনিময়...

কবি সৌমিত্র চ্যাটার্জী
শংকরপুর, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান














জীবিতের সন্ত্রাস
মীরা মুখোপাধ্যায় 

একটি বিছানা খুব এলোমেলো,আলগোছে পাতা 
বিছানায় শুয়ে আছে একজন জীবিত ও
অন্যজন কিছুপূর্বে মৃত 

মৃত লোকটির নাম ধরা যাক এক্স
অঙ্কের নিয়ম মেনে জীবিত ওয়াই।
বিছানার সামান্য জায়গা জুড়ে মৃত এক্স
জীবিত ওয়াই ঠেলতে ঠেলতে তাকে
অবশেষে নীচে ফেলে দিল 

মৃতদের জন্য কোন স্থান নেই
মনের ভিতর গড়ে তোলা সমস্ত মিনার 
ভেঙে পড়ে কিছুদিন পরই
জীবিতের প্রবল সন্ত্রাসে

ভঙ্গুর বিষাদ জুড়ে বৃষ্টি নামে
সার্সিতে আছড়ে পড়ে মেঘ।
একমাত্র প্রেমিকের মুখ
বহু চেষ্টার পরও অসম্ভব আবছা হয়ে আছে

কবি মীরা মুখোপাধ্যায়
তেলিপুকুর, ডাক শিমুরালী, নদীয়া


















 
বিমল মণ্ডলের অণুগল্প
মায়ের আদর্শ

—কি রে কাঁদছিস কেন? 
— মায়ের জন্য।
—জানেন বাবু কতদিন আমার মা আমায় ছেড়ে চাঁদের দেশে চলে গেছে। সেই দিন থেকেই আমি একা। 
— জানিস, এই যে গোটা পৃথিবী দেখছিস- তোর যে চোখের জল তার কেউ মূল্য দেবে না রে।আর তা ছাড়া মা কি কারোর চিরকাল বেঁচে থাকে? তাই চল তোকে বাড়ি রেখে আসি।

— না, আমি বাড়ি যাবো না। আমাকে বাড়িতে কেউই ভালো বাসে না।শুধু মায়ের আদর্শ নিয়ে একটুখানি বেঁচে থাকতে চাই।
— তুই কি করতে চাস বল আমায়। আমি তোর পাশে থাকার চেষ্টা করবো। 
আসলে রামেশ্বরও বাবা ও মাকে হারিয়ে একা থাকে। একটা ঘরও বানিয়েছে।সংসারও করেনি।তাই মা হারা ছেলেটিকে দেখে  তারমধ্যে যেন অপত্য স্নেহ জন্মলাভ করেছে। তাই ছেলেটিকে সন্তান হিসেবে মনে মনে স্বীকার করে নিয়েছে। তাই বারবার ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে—

—  কি রে বল?  তোকে সব রকমের সাহায্য করবো আমি।
— সত্যি বাবু? আমার পাশে থাকবে? 
— বললাম তো! বল তুই কি চাস?
— আমি আর বাড়ি যাবো না বাবু। তোমার কাছেই থাকব। আমি শুধু মায়ের আদর্শে বড়ো হব।কি বাবু পারবে তো?
— মা তো মা-ই। মা-র মত কি তোকে মানুষ করতে পারব? তুই আজ থেকে আমার কাছে থাকবি।আজ থেকেই দুজনই মায়ের আদর্শে বড়ো হব। কি তাই তো? 

ছেলেটি রামেশ্বর বাবুর বুকে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। রামেশ্বরও ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভবিষ্যতে মায়ের আদর্শের এক স্বপ্ন দেখেতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। 

                           
      সাহিত্যিক বিমল মণ্ডল 
               কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ

















 
নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates