হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


🔺অণুগল্প:

           
            🔰মোনালিসা নায়েক🔸আরামবাগ🔸



🔴 সাত বছরের তিতলি টিফিনের বেল বাজার পর টিফিনবক্স হাতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের কাছে গিয়ে বসে।তারপর শিশুমনের সরলতায় দৈনন্দিন সুখ -দুঃখ ভাগ করে নেয় ,এরকমই এক মুহূর্তে তিতলি বলে –জানিস ,সন্ধ্যায় আমি মায়ের কাছে সব টাস্ক সেরে ঠাম্মাদের ঘরে থাকি,ঠাম্মা-দাদাই আগেকার দিনে তাদের জীবনের সত্যি ঘটনার কথা,কত রূপকথার গল্প বলে-আমার কাছে ওটা বেস্ট মোমেন্ট।

তখন তিতলির আর এক বন্ধু তিন্নি বলে আমার বাবা অফিস থেকে ফেরার আগেই আমি সব টাস্ক সেরে নিই, বাবা বাড়িতে আসলে আমি বাবার ট্যাব নিয়ে ইউটিউবে ঠাকুমার ঝুলি দেখি,গেমস খেলি আমার ওটা বেস্ট মোমেন্ট।পাশ থেকে অদৃজা উদাসীনভাবে বলে আমার বাবা-মা দুজনেই অফিস থেকে ফিরে রোজ ঝগড়া করে নিজেদের মধ্যে। আমার ও খুব ঠাকুমাকে দেখার ইচ্ছে হয় জানিস,শুনেছি ঠাকুমা আছে,বৃদ্ধাশ্রমে থাকে সেই নিয়েও বাবা-মা'র মধ্যে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা হয় ।আমি খুব কষ্টে থাকি,বাবা-মা বুঝতেই চায়না সেকথা ।স্কুল বসার বেল পড়লো যে যার মতো ক্লাসরুমে ঢুকে গেল ।

সন্ধ্যায় তিতলি মায়ের কাছে সব টাস্ক সেরে নিয়ে প্রতিদিনের মতোই দেখে বাবা ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজে,মা ফোনে ব্যস্ত তখন সে চুপ করে ঠাম্মার ঘরে গিয়ে দেখলো ঠাম্মা -দাদাই দুজনে খুশির মেজাজে কত গল্প করছে। তিতলি তাদের মাঝে গিয়ে বসলো, তারপর ঠাম্মাকে বললো–আমার বাবা-মা তোমাদের মতো বয়সে এরকম ভাবে গল্প করবে তো ঠাম্মা?




       ✒️ প্রতাপ সিংহ🔹হরিদেবপুর,কলকাতা🔹



🔵 অনেকদিন পরে কাছে এলে
বসলে ঠিক আমার পাশটিতে।
চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না,
তুমি আমার হাত জড়িয়ে ধরলে
একী ! তোমার হাত এত ঠাণ্ডা কেন !
কেন আমার শিরদাঁড়া বেয়ে
একটা বরফের স্রোত নেমে গেল
কিছু বুঝে উঠবার আগেই
তোমার - আমার মাঝখানে
একটা খাড়া দেয়াল
আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে উঠছে


কাছে থেকেও তুমি যে এমন
আশ্চর্য দূর রচনা করতে পারো
বুঝতে বুঝতে বেশ সময় লেগে গেল ।


                   ✒️ তনুশ্রী গুহ🔸কলকাতা🔸

                   


💦 বিরহের মেঘলা আকাশ,

দিচ্ছে তার চলে যাবার পূর্বাভাস ।

সে আজও আমার হৃদস্পন্দন ,

আমার প্রতিটি টানেই তার অনুভূতির গহন ।

কাব্যের পুস্পরসে ছিলাম একে অপরের দর্পণ,

তবুও তাকে করতে হল তার ইচ্ছের কাছেই অর্পণ ।

কথা তবুও যেন বলে মাঝে মাঝে,

যদি আমার প্রতি তার আবেগি বোধ সাজে ।

দূরের কুঞ্জবনে অনুভূতির কি যে মায়া,

আজও কোনো এক রুপে অনুভব করি তার হারিয়ে যাওয়ার ছায়া ।

ভালোবাসার কোন্ জালে আবদ্ধ এই অন্তিম মহিমা?

অনুভূতির সৌজন্যে সাজিয়ে রাখবো আবেগ,মন আজও মানেনা । 


         ✍সুজিত কুমার মালিক🔸আরামবাগ🔸


💢 গল্পটা শেষ হলো অনেক প্রশ্ন রেখে !
সাদা চামড়ার তথাকথিত সভ্যজনেরা
গায়ের রঙে সাযুস্য রেখে ডাকে-কৃষ্ণকলি ।
শরীরের মাপ নিয়ে উপহাস করে
বর্ণভেদের ধ্বজাধারী মুখোশের দল।
কৃষ্ণকলি-তোমরা কেবল বেঁচে থাকো
গানে, পদ্যে, কবিতায় আর কল্পনায়...
নির্বাচন নয়,আজো হও নির্বাচিত।
চাহিদা মেটানো প্রেমিক,স্বামীরা
যোগ্যতার প্রশ্ন তোলে দিনের আলোয়।
সাদা চামড়ার কালো মনের মানুষগুলো
খোলার চেষ্টাই করে না মনের দরজা।
অবহেলা,বঞ্চনা,ঘৃণা সঞ্চিত হতে হতে
আজ জীবাশ্ম-এ পরিণত মন।
তোমার স্বপ্ন দেখার অধিকার নেই,
তোমার বিলাসিতা সাজে না,
তোমার ইচ্ছেরা সমাধিস্থ জন্মলগ্নেই।
কালের বিবর্তনে পাল্টিয়েছে বঞ্চনার ধরণ।
কৃষ্ণকলিরা খুঁজে চলেছে প্রশ্নের উত্তর-
সৌন্দর্য কোথায় থাকে-রঙে না মনে ?


                       🔴 আশরাফুল মন্ডল🔸দুর্গাপুর🔸


🔰সেই মেয়েটিকেই দেখি শুধু। একমাত্র সম্বল ইজ্জত খুইয়ে সে বিবসনা। চারিদিকে দাঁড়িয়ে নাগরিক চোখ পলকহীন। চেটে নিচ্ছে বেইজ্জত শরীরের নগ্ন ভাঁজ।মনে আঁকছে মদির দৃশ্যসকল। ঠিক কীভাবে লুঠ হয়েছে তার ঠাসা দেহবল্লরী! নধরদেহ রাঙা করেছে ঠিক কতগুলো অব্যর্থ লালাঝরা কামড়! সমবেত নাগরিকবৃন্দের চোখে অনুমানযোগ্য উপভোগমধুর মাপামাপি। বেহায়া মেয়েটি কাঁদে না। মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা মোমের ধ্রুপদী পুতুল যেন।

মেয়েটির শরীর ভরে যাচ্ছে অজস্র চোখের  
আঁচড়ে...



            📚 অরুণ কুমার সরকার🔹শিলিগুড়ি🔹



🔰 হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসার বিনিময়ে
প্রতিধ্বনির মতো ফেরে অবহেলা
ক্রমাগত আঘাতে ভাঙতে থাকে এক একটি 
                                                  পাঁজর

আহত বুকে সাঁতার কাটতে ভুলে যায় নরম 
                                                   জোছনা

সাজানো মাইলফলক
অসহায় দাঁড়িয়ে পড়ে লিপিহীন প্রান্তরে
এরই নাম কষ্ট

ভালোবাসার আঁতুড়ঘরে জন্মে
কারা যেন আহত হৃদপিন্ডের সাথে করে যায়
                                                          খেলা 
অতৃপ্ত তৃষ্ণায় 
শুকিয়ে ওঠে বুক
তবুও বেঁচে আছি দু'বেলা
অভাব কুড়াবো বলে...


              🔰 অর্পণ কর্মকার🔹পূর্ব বর্ধমান 🔹



🍁গলায় পেঁচানো মাফলারটা খুব চেনা
নিজের জিনিস চেনাই তো হবে ।
অচেনা রাস্তাও বারেবারে পেরোলে
পাশের বাড়ির মেয়ে হয়ে যায় ।
বারবার পাক খাওয়াতো যে গলি-
যে গলি ধোঁকা দিতো,
রাস্তার খোঁজে নেমে যে রাস্তা শিখিয়েছিল ভুল থেকে শিক্ষা নিতে,
তুলতুলে মেয়েগুলো এঁকেবেঁকে
হারিয়ে যেতো ।
বিশাল দেওয়ালে একঝাঁক
রুপোলি মুখ হাতছানি দিতো,
তবু কখনো স্কুল পালিয়ে
যাইনি সিনেমাঘর । 



                 𔗛 ঋভু চট্টোপাধ্যায়🔹দুর্গাপুর🔹

             

               ১


🔺এভাবেই কাক জন্ম খুঁটে খায় বিক্রিত অধ্যায়,
অনবরত বুলিয়ে নেওয়া তুলি, একে একে ঘাড়
 থেকে ঝরে গিয়ে ছবি আঁকে মধ্যবিত্ত যকৃত
যারা সব দেওয়াল পার করে তাদের মিছিলের
কেনা পায়েও ঘন্টা বাঁধা।হয়ত একদিন
অন্ধ রাজার সামনে বসে থাকা সঞ্জয়ের স্বরে
ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলে ছিল,তারপর ধ্বংসের
উপকরণে তৈরী হল কৌরব সময়।
কে যেন নরকের সংজ্ঞাতে মন বেঁধে রাখে,
তারপর একে একে সব দেবদূত স্বর্গ থেকে
লাথি খেয়ে নিচে নেমে ভিখারীর বেশে কাক জন্ম,
কে জানে তার থেকে আর কতটা বিরিয়ানির প্লেটে ?

                 ২

🔺কেউ কেউ ছড়িয়ে দেওয়া পচা ভাতের মাথায়
পাখি চাপায়, তারপর খেতে দেওয়া পাখিদের
দিকে বিড়াল, বিড়ালের দিকে কুকুর, এবং শেষে
এক প্লেট বিরিয়ানির পিরামিড লেখে।
এখানে ধানের কাঁধে রোদ মাখা জল ছাড়ার
উপকরণে গোষ্ঠীগন্ধ। পিছনের মঞ্চে সব ছায়াদের
বৃত্তে দাঁড়িয়ে থাকা অশরীরি হাত পা,
দিব্যি মাথার অনুপস্থিতিতেও নিজেদের মিশিয়ে দেয় পাখি জন্মের আজন্ম অব্যয়ে। ভালো মানে কোন উপপাদ্য না হলেও এখানেও জন্মের গায়ে এখনো ভাতের কষ্ট লেগে আছে।
               



                 ৩

🔺শোনা যায় কেউ নাকি গোত্র দেখে শ্বাসের সাথে
 টেনে নেওয়া শেষ নিঃশ্বাসের স্রোতেও  প্রাণভরে
বাঁচতে  চেয়ে ছিল। এখনো চুলের গায়ে রক্তের মানচিত্র,পোশাকেও খণ্ড খণ্ড বাঁচার হাহাকার। এরপরেও তো পতাকা  মৃত্যু আর রক্ত, এর পরেও মিউজিয়াম,লাইন ও টিকিট ঘর,সব এক ভাবে উপস্থিত জানান দেয়। তারপর সময় কচ্ছপ
ও তার পিঠে চেপেই পাক্কা এক যুগ পার। শোনা যাচ্ছে একটা পাগলা ঘন্টার আঘাতে মাথা নাড়ছে কয়েকটা মানুষ পাখি,দু’পাশে তাদের দেখেই লজ্জা পেয়ে দু’দিকে  উড়ে যাচ্ছে আরো হাজার খানেক। এদের মাথায় কলম,সেখানে একটা কুকুরের বেল্ট বাঁধা আছে।

                   ৪

🔺না, ঠিক এই জন্যেই এখনো আরেকটা মহাভারত না লেখা হলেও আরেকজন ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের পিঠে উড়ে
যাচ্ছে চাঁদ থেকে চাঁদার মণ্ডপে। লাল নীল বাতির গাড়ির ভেতরে কোন রকমে বেঁচে থাকা একটা চোখ সব অহংকারের পরেও একটা ময়লা ধরা গা চেটে পরিষ্কার করে,তারপর পাখিদের জায়গা দখল করে ছুটে যায় এক ডাল থেকে আরেকডাল,এক মানুষ থেকে আরেক মানুষ অথবা এক পৃথিবী থেকে ঠিক আরেকটা পৃথিবীর আশায়।



      📂নীলাঞ্জনা সাহা🔸টিকরহাট,পূর্ব বর্ধমান🔸


🔵 মাতৃ জঠরে তিলে তিলে তুলতুলে শিরদাঁড়া,
অপরিণত তুলতুলে শিরদাঁড়ায় অমৃত সুধার স্পর্শ।
কৈশোর হতে যৌবন প্রাণবন্ত শিরদাঁড়া
সুধা রসে সুগঠিত শিরদাঁড়ায় কালির আঁচড় ।
সাদা কালোর তফাৎ এর দোটানায় অবিবেচিত শিরদাঁড়া
স্বৈরাচার স্বেচ্ছা তন্ত্রের আঘাতে ভেঙেছে শিরদাঁড়া,
কাঁকড় বিহীন মৃত্তিকায় রূপান্তরিত শির  ।
মৃত্তিকা হারায় শির,খেয়ালী পাগলি হাওয়ায় ছোঁয়ায়,
স্বপ্নের আঘাতে কালবৈশাখীর দংশনে জেগে ওঠে অনুভূতি সূচাগ্র সম,
যদি কভু অজানা ধড় শক্ত হয় শিরপরে,ত্রস্ত শাণিত বাক্য বাণে হবে নতশির;
যে অমৃত সুধায় লৌহ সম শিরদাঁড়া করলে ধারণ,
হায় অবোধ ! কেন তারে আচম্বিতে বিসর্জন দিলে কাপুরুষতার ছোবলে,
তোমারে পোক্ত কোরে অব্যক্ত যন্ত্রণায় অশক্ত শিরদাঁড়ায় স্থান বৃদ্ধাশ্রমে ।


            ☮ তীর্থঙ্কর সুমিত🔸মানকুন্ডু,হুগলি🔸



๑ না হয় লিখে যাবো
হাজারো কবিতা
সময়ের ফাঁকে
লিখে রাখা ইতিহাস
আগামী থেকে আগামীর
সময় বদলে গেলে
জামা পাল্টায়
আর,
মুখ ঢাকলেই গল্প হয়ে ওঠে মুহূর্ত।




𔗛 হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 🔹ময়নাডাঙা , হুগলি 🔹


🔰সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে উড়ে গেল ঝড়
সারারাত সব্বাই নড়েছিল নেচেছিল
পরদিন সকালে
পথে পথে সারি সারি মৃতদেহ
জলে গুলে হালকা হয়ে গেছে সবুজ

জল নেই, বিদ্যুৎ নেই
পথে পথে গাছে গাছে সব আটকে আছে
এত গাছ না থাকলে 
পরদিন সকালেই সবকিছু অবাধ হতো 

গাছ পড়েছে
বাড়ি তো আছে 
ভেঙেছে নিজে
কিন্তু ভাঙতে দেয় নি
যেভাবে ছেলেকে সাজিয়ে দিয়ে
বাবা মা চলে যান বৃদ্ধাশ্রমে ।




                 🔰 অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী  🔸নদীয়া🔸
  


🔴 ঢের লাইভ শুষে নিচ্ছে আমার নির্জন অনাকাঙ্ক্ষিত দিন...
ফোনবন্দী হয়ে আছে আমার পা, চোখ, অসুস্থ কিছু দৈনন্দিন।

ভুলে যাই তুমি কেমন করে বিয়াল্লিশ বছরের চামড়ার ব্যাগে ঢুকে গেছ-
তোমার সামনে নুয়ে পড়া খাঁচা বন্দী মানুষের পাখিরালয়-
বেদনা ক্লিষ্ট মানুষের মুখে পোট্রের্ট সেঁটে আছে।
গলাবন্দী হয়ে আছে তোমার চিৎকার-
তোমার আজানুলম্বিত বাহু প্রতিবাদকে মুঠো ভরে নিয়ে মাথানত হয়ে আছে মাটির দিকে।
তুমি আসলে কিছুই দেখছ না...
নিজেকে নতুন বস্ত্রের মতন ভাঁজ করে নিয়ে মেমোরিকার্ড হয়ে ঢুকে গেছ মুঠোফোনের নিজস্ব ঘরানায়...     

পথ তোমার পা'কে চেয়েছে অনেক দিন
আকাশ ঝুঁকে নেমে এসেছে তোমার দুটো চোখ দেখবে বলে
অপেক্ষারা গলির মোড়ে...
তুমি শুধু ভাঁজ খুলে বেরিয়ে এসো
দেখ তুমি মেমোরিকার্ডের চেয়েও অনেক বড় মানুষ...  


                      সুজিত রেজ🔹চুঁচুড়া ,হুগলি🔹



সকালের জালোরি পাসে 
জীবনানন্দের  কবিতার অন্ধকার  
ছ'হাতে সরিয়ে দিয়ে আমরা তিনজন  
এগিয়ে যাই ছোটো এক টাকার কয়েনের মতো । 


দিল্লির কনভেন্টের দুই ছাত্রছাত্রী 
দেওদারের স্থূল কাণ্ডের কুয়াশার আড়ালে , 
ধূসর পাণ্ডুলিপি লিখে,এডুকেশনাল ট্যুর সার্থক করে । 
                                                


এক গুজরাটি নবদম্পতি , 
যারা কুলুর মণিকরণের উষ্ণ প্রস্রবণে জলকেলি করতে করতে 
বেলা-অবেলা-কালবেলায় 
মিথুনক্লান্ত শরীর সেঁকে নিচ্ছিল,তারাও এই পথে। 
                                                   


আমাদের ড্রাইভার সঙ্গে আসেনি। 
সে এখন চরস ফুঁকে,মহাপৃথিবীর কৈবল্যধামে , 
মহাদেবের বাঘছালের চাকা চাকা দাগে,
চিনে এলইডি আলো লাগায় আর খোলে । 


আমার মামা পাইন ফল কুড়িয়ে কোলগেট হাসি হাসে , 
যেন পরশপাথর পেয়েছে 
নির্জন স্বাক্ষর রেখে ভাইয়ের হাতে দিয়ে বলে 
কোনো গন্ধ নেই ।


কিন্তু আমার নাকে জালোরি পাসের গন্ধ 
আজও লেগে আছে !


🔸ছোট গল্প:

          ໑ চয়ন কুমার রায়🔹পূর্ব বর্ধমান🔹




🔵লকডাউন ঘোষিত হ‌ওয়ার পর অনেকদিন শিবুকাকার খোঁজ নেওয়া হয়নি। শিবু বাগদি আমার বাবার আমলের এক হতদরিদ্র বর্গাদার। বছরে দু'একবার পৈতৃক ভিটেয় সশরীরে হাজির হ‌ওয়া ছাড়াও শিবুকাকার বড় ছেলের ফোনে যোগাযোগ রক্ষা হয়। বরাবর ফোন করলেই সবার খবরা-খবর দেওয়া নেওয়া,আমার পৈতৃক সম্পত্তি কীভাবে দশভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে,সেসব রেকর্ড বাজানোই তার প্রথম আলাপ।
আজ ফোন ধরে তার ধারে কাছে না গিয়ে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করল ।
"আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে বাপ, সর্বনাশ হয়ে গেছে! "
বারবার জিজ্ঞাসা করেও সর্বনাশটা কী জানা গেল না। ও প্রান্ত থেকে কাকির গলা শোনা গেল।"কে ফোন করেছে? দাও আমাকে। তুমি বসে বসে কাঁদো, তাহলেই ছেলে ঘরে ফিরে আসবে! "কাকির ধমকে কান্না উচ্চগ্রাম থেকে অনেকটা নিম্নগামী হলো। একসময় মহিলা সমিতি করত। তাই কাকার থেকে কাকি অনেক বেশি স্মার্ট। কথাবার্তা স্পষ্ট, কাটকাট।
"কে বলছ? সুমন! এতদিন পরে কাকা কাকির কথা মনে পড়ল বাবা! লকডাউনে আমরা কেমন আছি, কী খাচ্ছি, কোন খবর তো নিলে না! "
আমার মুখ দিয়ে কোন সদুত্তর বেরল না। আমতা আমতা করে যেটা বলতে চাইলাম, সেটা দিয়ে কিছু বোঝানো গেল না।
কাকি বলে, "তোমার আর কী দোষ।যারা কাছে আছে তাদের কাছ থেকেই  কোন
সাহায্য মেলে না, আর তুমি তো অনেক দূরে থাকো! "
আমি বিস্মিত হয়ে বলি, "সেকি!
রেশন -টেশন পাচ্ছো না কিছু? "
কাকি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে, "রেশন তো পাচ্ছি, দু'বেলা নুন ভাত ও জুটছে। কিন্তু মনে শান্তি নেই বাবা! "
আমি বলি, "ঠিকই বলেছ। কী যে এমন ভাইরাস ঢুকল, সারা বিশ্বের লোককে একেবারে ঘর ঢুকিয়ে ছাড়লো! "
"আমার ছোট ছেলেটা যে ঘর ঢুকতে পারলো না বাপ! "
কাকির গলাটা ধরা ধরা লাগলো। মনে হল মুখে আঁচল চাপা দিয়ে গুমরে গুমরে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "কী হয়েছে?কাঁদছ কেন? কী হয়েছে নবীনের?"
উত্তর পেতে একটু সময় লাগলো। হয়তো চোখ মুখ মুছে নিজেকে সামলে নিচ্ছিল।
"তুমি তো অনেকদিন কোন খবর রাখো না। নবীন ঠিকাদারের সঙ্গে চেন্নাই -এ রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েছিল ওখানে মজুরী বেশি। টাকাও পাঠাচ্ছিল মাসে মাসে। তারপর লকডাউনের জন্য আটকে পড়েছে। "
আবার গলা দিয়ে যেন একটা প্রচণ্ড কষ্ট ঠেলে বেরিয়ে আসে। আমি সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করি,
"কাকি, অত দুশ্চিন্তা করছো কেন? নবীন কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরে আসবে। "
"তুমি জানোনা সুমন, কি নিদারুণ কষ্টে আছে ছোটটা!
থাকার জায়গা নেই, খাবার নেই। একজায়গায় গাদাগাদি করে অনেক লোক আছে। খাবারের সন্ধানে রাস্তায় বেরোলে পুলিশ মারছে!"
"তুমি ভেবনা, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য ট্রেন চালাবে সরকার। "
কাকি অবাক হয়ে বলে, "পরিযায়ী শ্রমিক! বাপের জম্মে এমন কথা শুনিনি বাপ। চিরকাল দেশের খেটেখাওয়া মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কাজ করে বেড়ায়। অফিস বা কারখানার কাজ তো নয় যে একজায়গায় বসে বসে করবে? "
কাকি আমার মগজে একটা গুরুতর প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিল। পরিযায়ী পাখি, জন্তুজানোয়ার বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আবহাওয়ার কারণে বা খাদ্যের সন্ধানে আসে।কয়েক মাস কাটিয়ে আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যায়। কিন্তু এই সব অসংগঠিত শ্রমিকদের সঙ্গে কি তুলনা চলে? ওরা তো দেশের-‌ই মানুষ!

"ট্রেনের কথা বলছ ?স্টেশনে ট্রেনের খবর নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে খুব মার খেয়েছে। সাতদিন আগে ফোন করে বললো, যেভাবে হোক ওরা ঘরে ফিরবে। তারপর থেকে আর কোন খবর নেই। "
কাকি আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। বুকের যন্ত্রণা দুর্বারবেগে বেরিয়ে এলো।
"কাকি, তুমিও এভাবে ভেঙ্গে পড়ছো? হয়তো দেখো, ফোনের ব্যাটারি বা ব্যালেন্স নেই। তাই ফোন করতে পারছে না। "
"না, তা নয়। আমি মা, সব বুঝতে পারি। আমার ছেলেটা হারিয়ে গেছে। রোজ টিভি তে খবর দেখি, আর ছোটটাকে খুঁজি। দেখি কতলোক পায়েহেঁটে, সাইকেলে কতভাবে আসার চেষ্টা করছে। আমার ছেলেকে দেখতে পাই না! দুর্ঘটনায়, না খেতে পেয়ে কত মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে! "কথাটা বলেই যেন শিউরে উঠল। গলা দিয়ে সেরকম একটা শব্দ বেরিয়ে এলো।
আমি বলি, "ভগবানের কাছে প্রার্থনা করো। "
"তুমি জানোনা সুমন, আমি কোন কিছু ভগবানের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকি না। নেতাদের কাছে গেছি, বি. ডি. ও-র কাছে গেছি, এম. ‌এল. ‌এ-র হাতে পায়ে ধরেছি, কেউ সাহায্য করেনি। নাঃ, আমার ছেলেটা আর ফিরবে না! "কথাটা হয়তো ভুল নয়। তবু কোন মা এভাবে বলে না। আমৃত্যু বিশ্বাস করে যে তার ছেলে আবার ঘরে ফিরবে। একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য মহিলা এমন রূঢ় বাস্তববাদী কীভাবে হয় ভেবে পাই না।
"শোন সুমন, আমার কি মনে হয় জানো, হয়তো গরীব খেটেখাওয়া মানুষের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা হয়তো সমাজের বোঝা! তাই নিকেশ করে দিতে চায় আমাদের। তবে এটাও শুনে রাখো, সহজে আমাদের শেষ করতে পারবে না। একদিন সব ষড়যন্ত্রের হিসেব আমরা চুকিয়ে দেব। "
সন্তান শোকাতুরা এক মা এরকম একটা ভয়ঙ্কর কথা বলেই ফোনটা কেটে দিল ।



📚ডা: তারক মজুমদার🔹উত্তর ২৪ পরগণা🔹




🔰ঘুমন্ত হায়না আসে
কাঁচের পাত্রে ।
তার দাঁতে চোখে
কুয়াশার প্রলেপ দিয়ে
আমি ছুটতে থাকি----।
যে পথে কাল তুমি আসোনি ।
যদি আজ ভুল করে আসো
তুমি আর আমি
মুখোমুখি মৃত্যু উপত্যকায়-----।

🔸গল্প:


           🔰ঋভু চট্টোপাধ্যায়🔹দুর্গাপুর 🔹



    ( সাল দু’হাজার)

🔵টিফিন কৌটোটা সেই মাত্র ব্যাগ থেকে বের করে অপরাজিতা বেঞ্চের ওপর রাখল। অমনি ক্লাস সেভেনের একটা মেয়ে হুড়মুড় করে ঢুকেই একটু থমকে দাঁড়িয়ে গেল। চারদিকটা একবার দেখে লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা সমাপ্তিকে জিজ্ঞেস করল, ‘এটা ক্লাস টুয়েলভ সায়েন্স না আটর্স ?’ 
–আর্টস।
-অপরাজিতাকে বড়দি ডাকছেন।
সমাপ্তি লাস্ট বেঞ্চ থেকেই চেল্লাতে আরম্ভ করল,‘অপরাজিতা,শুনলি তোকে বড়দি ডাকছেন, যা দেখা করে আয়।’
-হয়ে গেল।
টিফিনের কৌটটা বেঞ্চে নামিয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল,‘কে বলল?’
–দেখলি না, রিমিদির বোনটা এসে বলে গেল।
বড়দি আবার ডাকছে কেনরে বাবা, কোন ম্যাডাম তো কমপ্লেন করবে না, কিছু করেও নি, তাহলে? আর খাওয়া হল না। টিফিনটা ব্যাগে ভরতে গিয়েও বের করল। কি টিফিন দিয়েছে একবার দেখতে হবে, ভালো টিফিন থাকলে ফিরে এসে আর পাওয়া যাবে না। বাকি সবাই ভাগাভাগি করে খেয়ে নিয়ে প্যাঁচার মত মুখ করে বলবে,‘তোর টিফিনটা খেয়ে নিয়েছি, তোর খিদে পেলে আমরা চাঁদা তুলে ঝাল মুড়ি খাওয়াতে পারি।’
এমনিতে বান্ধবীদের কিছু বলে না।পড়াশোনায় ভালো হলেও সবার সাথেই খুব ভালো ভাবেই মেশে, গল্প করে। একসাথে আসে, বাড়ি ফেরার সময় এক সাথে ফেরে।এখন আবার বান্ধবীদের কিছু অন্য বিষয়েও সাহায্য করছে। তার বিনিময়ে বান্ধবীরাও টুকটাক দিচ্ছে। ঠিক কি করা যাবে ভাবতে ভাবতেই টিফিন কৌটটা খুলে মিষ্টিটা খেয়ে নিল। আরো ভালো কিছু নেই, বাকি দুটো রুটি আর আলু ভাজা আছে।এগুলো খেয়ে নিলেও অসুবিধা হবে না। ব্যাগে টিফিন কৌটটা ঢোকানো পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু ক্লাস থেকে বেরিয়েই দুটো পা কেমন যেন অবশ হয়ে গেল। হেডদি মারেন না, কিন্তু খুব বকেন, কথায় কথায় শাস্তি দেন, অথবা গার্জেন কল করেন।একবার গার্জেন কল হলে  অপরাজিতাকে আর দেখতে হবে না। মেজদির ম্যাথ টিউটর গত মাসে মাকে হোম ওয়ার্ক না করবার কথা বলেছিলন।স্যার চলে যেতে না যেতেই মা মেজদিকে কি মারটাই না মেরেছিল।পিঠে ঘাড়ে দাগ বসে গেছিল।রাতে মলম লাগাতে হয়েছিল।
আসলে মায়ের দোষও নেই, বাবা আচমকা মারা যাওয়ার পর মেয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে এসে যাওয়াতে প্রথম প্রথম ঠিক সামলাতে পারে নি।ডেথ গ্রাউন্ডে বাবার চাকরিটাও নিতে হয়েছিল।সব মিলিয়ে অবস্থা এক্কেবারে সঙ্গীন। মায়ের সব রাগটাই পড়ত অপরাজিতাদের তিন বোনের ওপর।একটু বেচাল হলেই মায়ের হাত চলত, কলেজে পড়া বড়দিও রেহাই পেত না।
 এই সব ভাবতে ভাবতেই হেডদির ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়েও একটা লম্বা শ্বাস নিল।তারপর আস্তে আস্তে দরজাটা হাল্কা করে খুলে মাথাটা গলিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘দিদি, আমায় ডেকেছিলেন?’
–বড়দি কিছু একটা কাজ করছিলেন, কথাগুলো শুনেই মাথাটা তুলে বললেন, ‘এসো।’
অপরাজিতা পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকে বড়দির উল্টোদিকের চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে রইল।বড়দি একভাবে আগের মতই কাজ করে যেতে লাগলেন।কিছুক্ষণ পরেই ড্রয়ার থেকে এক গাদা কাগজ বের করে টেবিলে রেখে মাথা তুলে বললেন,‘এগুলো চিনতে পারো?’
অপরাজিতা আগের মতই দাঁড়িয়ে থাকল।গলা শুকিয়ে আসছে, হাত পা কেমন যেন কাঁপচ্ছে। ঢোঁক গিলে বলল,  ‘না, দিদি ঠিক বুঝতে পারছি না।’
-বেশ, তাহলে একটু সামনে এসে লেখাগুলো ভালো করে পড়।
অপরাজিতা একপা একপা করে সামনে এগিয়ে চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে কাগজের বাণ্ডিলটা হাতে তুলতেই চমকে উঠল,‘এযে সব ওর নিজের হাতের লেখা।শুধু নিচে নামগুলো আলাদা কারোর হাতের লেখা।কোনটাতে সোনালি, কোনটাতে কাবেরি, কোনটাতে মুশকান।’
– মাস দুই আগে এমনি এক টিফিনের সময় আবিরা এসে বলে, ‘এবারের ওয়াল ম্যাগাজিনে তোর কবিতাটা খুব ভাল হয়েছে, মৃদুলাদি বলছিলেন, আমি তো দিদির কাছে বাংলা টিউসন পড়তে যাই।’
–তাই! কি বলছিলেন?
-বলছিলেন, এই বয়সে এত পরিণত ছন্দবোধ খুব একটা আসে না।চর্চা করলে ভালো লেখা হবে।
 আবীরা কয়েকটি কথা বলে তারপরেই আসল কথাটা বলে,‘আমার একটা কাজ করে দিবি?’
– কাজ! বল।
 -সেরকম কিছু নয়, তোর বাঁ’হাতের কাজ।
-ঠিক আছে, একটু বল শুনি।
-একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
-চিঠি?কিসের চিঠি?
–এমন কিছু নয়, বয়েস স্কুলের সেই রোহিত আছে না, চিনিস তো? আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে, তার জবাব তো দিতে হবে।আমি কিন্তু তো লিখতে টিকতে সেরকম পারি না, তাই বলছিলাম জবাবটা যদি তুই দিয়ে দিস।
-আমি!এই প্রেম পত্র থেকে আমি হাজার মাইল দূরে থাকি, মা জানতে পারলে চামড়া গুটিয়ে দেবে।
-তুই দূরে থাকিস, আমি তো থাকি না, আর তোর মা কিভাবে জানবে, তোকে তো প্রেমও করতে হবে না। আমি করছি তুই শুধু উত্তরটা লিখে দিবি।তোর মা জানতে পারবে না, প্লিস, তোকে ঝালমুড়ি খাওয়াবো।
 -সেই শুরু, তারপর থেকে কত যে চিঠি লিখেছে তার কোন হিসাব নেই। কেউ কেউ নিজের হাতে কপি করত, কেউ বা অপরাজিতার হাতের লেখাটাই দিয়ে দিত। আর অপরাজিতাকে প্রতিটা চিঠির বিনিময়ে পাঁচটাকা করে দিত।সেই পাঁচটাকাতে অপরাজিতা ফুচকা, ঝালমুড়ি খেত।টুকটাক জিনিসও কিনত।
ক্লাসের মেয়েরা ছাড়া এই ঘটনা আর কেউ জানতে পারে নি। অপরাজিতার একটা শর্তও ছিল, ‘কেউ যেন জানতে না পারে।’
এত পর্যন্ত ভালোই চলছিল, সপ্তাহে দুটো থেকে তিনটে চিঠি লিখত, টাকাও পেত।একবার বাড়িতে অল্পের জন্যে ধরা পড়ে নি।সে ঘটনাটাও বেশ মজার। সকাল বেলা বিছানা তুলে খাতার ভিতরে আরেকটা খাতা নিয়ে চিঠি লিখছে এমন সময় মা এসে খাতা টেনে বলে ওঠে, ‘কি লিখছিস দেখি।’ সে যাত্রাতে কোন রকমে বাঁচলে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম এর মধ্যে জেনে গেল কিভাবে? এবার যদি মাকে বলে দেয়!
-অপরাজিতা কাগজগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগল।হেডদি হাতের কাজ থামিয়ে বললেন,‘হ্যাণ্ড রাইটিংটা তোমার?’
অপরাজিতার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না।কষ্ট করেও ঘাড় নাড়ল,‘হ্যাঁ।’
–তাহলে তুমি আজকাল প্রেমপত্র বিক্রি করছ?
–না, মানে ঐ। অপরাজিতা একটু থতমত খেল।
-‘না মানে’ আবার কি? তুমি এই সব চিঠির বিনিময়ে টাকা নাওনি? শুনলাম দু’টাকা থেকে পাঁচটাকা পর্যন্ত নিতে। অপরাজিতা চুপ করে দাঁড়িয়েই রইল।পা’দুটো থর থর করে কাঁপছিল।হেডদি কিছু সময় চুপ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে ধমকের সুরেই বললেন, ‘কি হল, কোন উত্তর নেই যে।’
অপরাজিতা দু’চোখ ছল ছল করে উঠল।গলা দিয়ে কোন শব্দ বেরোচ্ছিল না।
– ছিঃ!সেম অন ইউ।তুমি ক্লাসের ফাস্ট গার্ল, এটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।তাও যদি নিজের জন্য লিখতে একটা কথা ছিল, অন্যের প্রেম পত্র তাও আবার টাকার বিনিময়ে লেখা! আমি আজই সবার গার্ডিয়ান কল করব।
অপরাজিতা এবার আর স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারল না, হেডদির টেবিলের আরো কাছে এসে বলে উঠল, ‘দিদি, এবারের মত ক্ষমা করে দিন, কথা দিচ্ছি আর কোন দিন হবে না, বিশ্বাস করুন, আমি কান মুলছি, আপনার পায়ে পড়ছি, মাকে বললে খুব মারবে, পড়া বন্ধ করে দেবে।’ হেডদি কিছু সময় চুপ থেকে অপরাজিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,‘মনে থাকে যেন।’
অপরাজিতা হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।চোখ দুটো মুছে অফিসের  বাইরের দিকে পা’দুটো বাড়াতেই বড়দি বলে উঠলেন,     ‘তবে তোমার লেখার হাত কিন্তু খুব ভালো,একটাও বানান ভুল নেই, আই অ্যাম ভেরি ইমপ্রেস্ট।’
ঐ শেষ তারপর থেকে অপরাজিতা স্কুলে আর কাউকে কোন দিন কাউকে কবিতায় প্রেম পত্র লিখে দেয় নি। তারপরেও অবশ্য অনেকেই বলেছে, কিন্তু অপারজিতা সটান সেই সব অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছে।
 তবে সেদিন বড়দির অফিস থেকে  চোখের জল মুছে বেরিয়ে আসার পরেও কাউকে কিছু না বললেও ক্লাসের সবাই মোটামুটি ভাবে বুঝতে পেরেছিল ঐ সব কবিতায় প্রেমপত্র লেখার সাথে একটা বড় সম্পর্ক আছে।ক্লাস করাবার মাঝেও দিদিরা ঠিক ঠেস দিয়ে কিছু না কিছু একটা বলতেনই।অপরাজিতা বুঝত, আরো অনেকেই বুঝত, কিন্তু কিছু বলত না।
আস্তে আস্তে কয়েকমাস কেটে গেল।বেশ কয়েকটা মাসও পেরিয়ে গেল।স্কুলে বেশ কিছু নতুন দিদিমণি এলেন, তাদের একজনের বয়স আবার খুব কম, ঐ দিদিমণিরও তখনও বিয়ে হয় নি। উনি অপরাজিতাদের বায়োলজি পড়াতেন।অল্পদিনের মধ্যে অপরাজিতাদের সাথে বেশ বন্ধুত্বও হয়ে গেল, টিফিনের সময় মিস প্রায়ই অপরাজিতাদের ক্লাসের মেয়েদের ডেকে ফুচকা, আইসক্রিম খাওয়াতেন, পড়াশোনার পাশে আরো অন্য বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনাও করতেন। প্রেম, ল্যাঙ, ঝারি কোন বিষয় বাদ থাকত না। দিদিমণি নিজের টাকাতেই মেয়েদের কমন রুমে একটা প্যাড ব্যাঙ্কের ব্যবস্থা করেছিলেন।তখন ভেন্ডিং মেসিনের চল হয় নি।অপরাজিতা ক্লাসের আটর্স সেকসেনে একটা মেয়েকে তার বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দিদিমণি নিজে তাদের বাড়ি গিয়ে মা বাবাকে বুঝিয়ে ব্যাপারটা সামলান। অল্পদিনের মধ্যেই দিদিমণি ক্লাস টুয়েলভের মেয়েদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে গেলেন।
কয়েক সম্তাহ পরে একদিন টিফিনের সময় আবার অফিস থেকে অপরাজিতার ডাক পড়ে।এইবার অপরাজিতা ভয়ে একদম কুঁকড়ে গেল। হেডদির অফিস থেকে বকানি খেয়ে আসার পরে আর কারোর জন্য কোন চিঠি লেখেনি, এবার কি আবার  কি জন্য ডাকল?
 জানতে পারলে  মা এক্কেবারে আস্ত রাখবে না। ভয়ে ভয়ে অফিসের দিকে যেতেই অফিসের একটু আগে নতুন মিসকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।অপরাজিতা অফিসের কাছে যেতেই নতুন মিস অপরাজিতাকে ডেকে স্টাফরুমের পাশে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন রকেমের কথাবার্তার মাঝে বললেন,‘তুমি তো খুব সুন্দর চিঠি লেখ।’
-চিঠি!কই মিস আমি তো সেরকম কিছু লিখিনি।
–না এখন না, তবে লিখেছ, আমি হেডদির আলমারি থেকে নিয়ে একদিন পড়ছিলাম, অসাধারণ।
অপরাজিতা হেসে উঠল,‘ও সব চুকে গেছে।সব বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে একটু মজা, আপনি কি যে বলেন মিস?  এখন আমি আর কাউকে লিখে দি না, সব বন্ধ, বাবারে ! নাক, কান মুলেছি।’
-শুধুই বান্ধবীদের? নিজের জন্যে কোন দিন লেখনি? চমকে উঠল অপরাজিতা।নিজের জন্য চিঠি! ভাবতেই সারাটা শরীরে যন্ত্রণা আরম্ভ হয়ে যায়। ব্যাচের একটা ছেলে দুদিন বাড়ি যেতে না যেতেই মা একদিন জিজ্ঞেস করে,‘ছেলেটা কে অপু? ব্যাচে আর কেউ পড়ে না, তোরই কেন খাতা নিতে আসে?’
-কি ভাবছ?
-এই আপনার প্রশ্নের উত্তর, সত্যি ম্যাম নিজের জন্য কোন লেখবার চিন্তা করিনি।সব বন্ধুদের জন্যেই লেখা।
-সে তুমি তোমার বন্ধুদের জন্যে বন্ধ করেছ বেশ করেছ, আমার জন্য একটা লিখে দেবে?
-অপরাজিতা আবার চমকে ওঠে, ‘আপনার জন্যে?’
–হ্যাঁ।আমি বাংলাতে অতটা ভালো লিখতে পারি না।
তারপরেই অপরাজিতা আরো কিছু কথা বলতে যাচ্ছিল, সেই সময়েই টিফিন শেষের ঘন্টাটা বেজে উঠল। অপরাজিতা কিছুই বুঝতে পারছিল না।ঠিক কি করা যাবে, তখনো খাওয়া হয় নি,স্টাফ রুমের পাশে একা বসে। বায়োলজি মিস একটু আগেই বলে বেরোলেন, ‘আমি তোমার জন্য আলু কাবলি এনে দিচ্ছি।’ মাথার মধ্যে হাজার হাজার শব্দ ঘুরছে। একবার মিসকে দেওয়া চিঠিটা পড়ছে, একবার সাদা খাতাতে চোখ রাখছে। এমন সময় রুমের ভিতর একটা ছায়া ঢুকতে দেখে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল হেডমিস দাঁড়িয়ে আছে। অপরাজিতা থতমত খেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠতেই হেডমিস বলে উঠলেন, ‘কি রে চিঠি তো লিখছিস, মিসকে তোর পাঁচটাকা নেওয়ার কথাটা বলেছিস?’

 🔸প্রবন্ধ:
                           

                            🔺মিঠুন রায়🔹ত্রিপুরা 



🔵বাংলা সাহিত্য জগতে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ধূমকেতুর ন্যায়।কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি তিনি একজন সংগীতশিল্পীও বটে।তিনি গোটা আঠারোটি গল্প লিখেছেন  আর উপন্যাস লিখেছেন মাত্র তিনটি।তাঁর কম-বেশী সব সৃষ্টিতেই সমাজ নিয়ে গভীর চিন্তা ব্যক্ত হয়েছে।তিনি যৌবনের কবি।তাঁর বিদ্রোহ,পৌরুষ,প্রেম প্রভৃতি হৃদয়বৃত্তি এই যৌবন বেগ থেকেই উৎসারিত।তাইতো 'অগ্নবীণা'য় তিনি শুনিয়াছেন--
  "ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?-প্রলয়  নতুন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন-জীবন-হারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!
তাই সে এমন কেশে বেশে 
প্রলয় বয়েও আসছে হেসে মধুর হেসে!"
 একসময় স্কুল ছেড়ে নজরুল যোগ দেন সেনাবাহিনীতে।সেনাবাহিনীতে মাত্র দুই বছরে পাঁচটি প্রমোশন পান।কিছুদিন পর সেনাবাহিনী ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
'জীবনের মূল্য আয়ূতে নহে,কল্যাণপূত কর্মে- এ চিরন্তণ সত্য প্রতিফলিত হয় বিদ্রোহী কবির জীবনে।একসময় যে বালক অভাবের তাড়নায়  রুটি মাখার কাজে যোগ দিয়েছিলেন,পরবর্তী সময়ে ঐ নজরুল সাহিত্য চর্চায় বিশেষ প্রতিভার ছাপ রেখেছেন।মানস গঠন বিন্যাসে নজরুল দেহবাদী শিল্পী চেতনা আশ্রয়ী।কবিতায় তাঁর দেহ চেতনার প্রমান রেখেছেন ভুুরিভুরি।সামাজিক অত্যাচার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজের জীবনে ক্রমঃঅভিজ্ঞতায় হিন্দু -মুসলমান সম্প্রীতির ভিত্তিভূমি তিনি তৈরি করেছেন।এ কারণেই  ধর্মীয়  সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি জীবনের বিরাট সময় ব্যয় করেন।অবশ্য এমর্মে তাকে 'কাফের','পাতিনেড়' এর মতো নানা বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে।অথচ তিনি সব অংশের মানুষকেই প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন।তাইতো সগর্বে বলতে পেরেছেন--"মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই।
                 নহে কিছু মহীয়ান।"
  রুশ বিপ্লবের প্রভাব তাঁর উপর পড়েছিল।করাচীতে থাকার সময়  ইরাণি কবি ওমর খৈয়ামের জীবন দর্শন তিনি বাংলায় অনুবাদ করেন।তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু -মুসলমান সম্প্রীতি সুদৃঢ় করা।তাইতো নিজেই গেয়েছেন --
    "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু -মুসলমান
      মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ।"
একসময় সাপ্তাহিক 'গণবাণী' পত্রিকায় 'হিন্দু-মুসলমান'শীর্ষক একটি প্রবন্ধ রচনা করেন।হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গোড়ামি আর মুসলমান সম্প্রদায়ের জঙ্গমতা দূর করতে তিনি সচেষ্ট ছিলেন।সংস্কারমুক্ত ভাবধারায় বিশ্বাসী নজরুল 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির ' উৎসবে ভাষণ দান প্রসঙ্গে বলেছেন --"যদি আপনাদের প্রেমের টানে আমাকে আমার একাকীত্বের পরমশূণ্য থেকে অসময়েই নামতে হয় তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন আমি সেই নজরুল।সে নজরুল অনেকদিন আগে মৃত্যুর খিড়কির দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে।সে দিন আমাকে কেবল মুসলমান বলে দেখবেন না।আমি যদি আসি,আসব মিলিত হিন্দু-মুসলমানের সকল জাতির উর্ধে যিনি 'একমেবাদ্বিতীয়ম' তাঁরই দাস হয়ে।"আবার অন্যত্র বলেছেন,-"আমায়  মুসলমান সমাজ কাফের খেতাবের যে শিরোপা দিয়েছে,তা আমি মাথা পেতে গ্রহণ করেছি।এরা কি মনে করেন হিন্দু দেব-দেবীর নাম নিলেই সে কাফের হয়ে যাবে?তাহলে মুসলমান কবি দিয়ে বাংলা সাহিত্য সৃষ্টি কোনকালেই সম্ভব হবে না ত্রৈগুণ বিবির পুঁথি ছাড়া "।সাংবাদিক হিসাবেও  তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।সান্ধ্য দৈনিক 'নবযুগ'-এর সম্পাদকীয় প্রমাণ করলো যে,নজরুল দাড়ি চাঁছার জন্য তলোয়ার ধরতে যান নি,আর কলম ধরেনি মনোরঞ্জনের জন্য।আবার'ধূমকেতু'তে সেই সময় তিনি লিখলেন-"সর্বপ্রথম ধূমকেতু,ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়।স্বরাজ -টরাজ বুঝি না,কেননা ও কথাটার মানে এক-এক মহারথী এক-এক  রকম করে থাকেন,ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব,সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা,শাসনভার-সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে।"
সত্যদ্রষ্টা কবি নজরুল অনেকটা বিদ্রুপের সুরে স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন--"ধর্ম জাতির নাম লয়ে এরা বিষাক্ত করে দেশ,
           এরা বিষাক্ত সাপ ইহাদের মেরে কর শেষ।"
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো তিনিও মনে প্রাণে ধর্মান্ধতা এবং  ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করতেন।নানা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে  উচু-নীচুতার ভেদাভেদের বিরুদ্ধেও তিনি সকলকে জানিয়েছেন-
    "আয় অশুচি,আয়রে শুচি
     এবার মায়ের পূজা হবে।"
আসলে ধর্মে-ধর্মে কোনো বিবাদ নেই।বিবাদ তৈরি করেছে শুধু মানব।তাইতো জাতের নামে বজ্জাতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কবি নজরুল  লিখলেন-- 'জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-
জালিয়াৎ খেলছ জুয়া
ছুলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতে নয়তো মোয়া।'
নজরুলের ভাবনায় হিন্দু -মুসলমান সংস্কৃতির দুই ধারা।তবে কেন একে অন্যের সাথে বিরোধ।এ বিষয়ে কবির আপেক্ষ-"হিন্দুত্ব-মুসলমানত্ব দুই হওয়া যায়,কিন্তু তাদের টিকিত্ব হিন্দুত্ব ও দায়িত্ব অসহ্য,কেননা এই দুটোই মারামারি বাধায়।টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়,ওটা পান্ডিত্য।তেমনি দাড়িত্ব ইসলামত্ব নয়,ওটা মোল্লাত্ব।এই দুই 'ত্ব' মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ যে চুলোচুলি।আজ যে মারামারি,হিন্দু-মুসলমানের মারামারি নয়।"
নজরুলের চিন্তাধারাকে গবেষক পিটার কাস্টার্স বর্ণনা করেছেন এইভাবে --'I believe that Nazrul's life  work has concrete meaning for suffering humanity today his method aimed at promoting mutual understanding between people of different faiths notably people belong to the two large religious communities of Bengal -Hindus and Muslims?'

 পরিশেষে বলা যায়,আজ গোটা বিশ্বেই সমন্বয়ের বড় অভাব।বিশ্বাসের ঘরে বারবার আঘাত আসছে।সম্প্রদায়গত বিরোধ বাড়ছে।এ বিভীষিকাময় অবস্হা থেকে পরিত্রাণে কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।তাঁর চিন্তা চেতনা নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।মৌলবাদ আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এই মূহুর্তে -'ধরো সবাকার হাত'।সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমেই আসুরিক শক্তির বিনাশ সম্ভব।এক্ষেত্রে প্রয়োজন মানবতার।নজরুর তার গানে বার বার মানবতার কথা বলেছেন।সংকটময় পরিস্হিতিতে একজন কবি হিসেবে নজরুলকে না দেখে মতাদর্শ হিসেবে তাকে গ্রহণ করা জরুরী।তবেই শত পূষ্পের মতো বিকশিত হবে আমাদের জীবনশৈলী।দূর হবে  সামাজিক বৈষম্য।


🔸প্রবন্ধ:


                  🔰শুভায়ন বসু🔹দুর্গাপুর


📘চারদিকে গুমোট গরম,বিরক্তিকর।সেই একইভাবে এই নতুন শহরে দিনগুলোও কেটে যাচ্ছে ।নানা রকম ভাবে কেটে যাচ্ছে।কিন্তু ভীষণই মনে হচ্ছে, যে সেরকম কিছুই ঘটছে না,বিশেষ কিছুই করা হচ্ছে না ,বড় কোনো প্রাপ্তি ঘটছে না, হুট করে এসে পড়ছে না কোনো বন্ধু  বা আত্মীয়, অবাক করা আনন্দজনক কোন খবরও থাকছে না ,এমনকি রাস্তায় হুট্ করে দেখাও হয়ে যাচ্ছে না পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে।দিনগুলো কেটে যাচ্ছে একেবারে কিচ্ছু না ঘটিয়ে। যদিও চারপাশে দুর্বোধ্য অনেক কিছুই ঘটছে, তবুও আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, করা হচ্ছে না  বা বলা হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ কোনকিছুই। অন্ততঃ মিটিয়ে ফেলা যাচ্ছে না একটাও পুরোনো ফয়সালা। নতুন দেশের নানা রকম নতুন লোকের সঙ্গে অবশ্য পরিচয় হচ্ছে, প্রত্যেককেই ভাল লাগছে আর মনের মধ্যে প্রত্যেকের অস্তিত্বই স্পষ্ট হয়ে বসে যাচ্ছে। কাউকেই ভোলা যাচ্ছে না, এমনকি যে লোকটা খুব একটা ভালো নয় বলে অন্যরা বলেছিল, তাকেও ভালো লাগছে, মনে থাকছে, শুধু এই জন্যই যে এও একটা ধরন। তাছাড়া কোনো মানুষই পুরো ভালো বা পুরো খারাপ হয় না, খারাপ লোকের মধ্যেও খুঁজলে কিন্তু কিছু কিছু ভাল গুণ দেখতে পাওয়া যাবে । আমার বাড়িতে একটা সুন্দর পোস্টার আছে,এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল ।সেটার মোদ্দা কথাটা এইরকম যে,জীবনের যাত্রাপথে গন্তব্যে পৌছোনটাই বড় নয়,যাত্রাপথটাকে উপভোগ করা আর তার ছোট ছোট অসংখ্য জিনিসকে মনের খোরাক করে নেওয়াটাই বড়।কারণ গন্তব্যের শেষটা নয়,পথ চলার মধ্যবর্তী আনন্দ আর অভিজ্ঞতাটাই আসল।
  শুধু এই জন্যই মাঝে মাঝে ভীষণ ভালো লাগে নিজেকে, ভালো লাগে পৃথিবীকে, ভালো লাগে প্রকৃতিকে। ভালোবেসে ফেলি সবাইকে ,চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে "আমি ভালবাসি"। কতদিন বাঁচব আমি জানিনা, কিন্তু যতদিন বাঁচব জীবনকে জানা-বোঝার সুযোগ থেকে যেন বঞ্চিত না হই। নানাভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে, নানা অনুভূতি, অভিজ্ঞতা নিজের করে নিতে ইচ্ছে করে ।কিন্তু এই একটা জীবনে কত কিছু করা সম্ভব? এই যেমন চলে যেতে ইচ্ছে করে সারা পৃথিবীর দুর্গমতম প্রান্ত গুলোতে, সুন্দরতম জায়গা গুলোতে, মিশে যেতে ইচ্ছে করে মানুষের মধ্যে,সেনাবাহিনীর হয়ে মরণপণ যুদ্ধে লড়ে যেতে ইচ্ছে করে, সমাজের অন্যায় গুলোর বিরুদ্ধে ঘা দিতে,রুখে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে,লিখে ফেলতে ইচ্ছে করে দারুন সব কবিতা, এঁকে ফেলতে ইচ্ছে করে নতুন ধরনের ছবি ,প্রচুর বই পড়তে ইচ্ছে করে, অনেক কিছু শিখতে ইচ্ছে করে,নতুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলতে অথবা মাস্তানের উপর মাস্তানি  করতে, দাগী অপরাধীদের ভীষণ শাস্তি দিতে, সারাদেশের মানুষের কাছে ভীষণ আদর্শ হতেও ইচ্ছে করে। কিন্তু এত কিছু এই একটা জীবনে করা সম্ভব নয়, এতভাবে বাঁচার পক্ষে জীবনটা বড়ই ছোট। তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়। জীবনটা শেষ হয়ে এলো, অথচ কত কিছু করার বাকি থেকে গেল ।কত পথে হেঁটে যাওয়া হলো না, কত মুখ চেনা হল না, কত কি দেখা হল না,কত ভুল শুধরোনো হলো না, আর হবেও না হয়তো। এই হল জীবনের ব্যর্থতা।
এইমাত্র কড়কড় করে মেঘ ডাকল, বৃষ্টি এখনই শুরু হবে। কিন্তু এই দূষিত পরিবেশে, ধোঁয়া আর ধুলোর মধ্যে বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে না।মনে হয় ,এখন যদি থাকতাম হিমালয়ের কোলে কোন ফুলের বাগানের মধ্যে ,একটা কাঁচের বাড়িতে বা পাহাড়ের ঢালে বয়ে চলা কোন ঝর্ণার পাথরের খাঁজে ,অথবা দিগন্তব্যাপী সবুজ ধান ক্ষেতের মধ্যে একটা খড়ের গাদায় হেলান দিয়ে শুয়ে, তবে বৃষ্টি দেখতে বেশ লাগতো। সেই সঙ্গে অনেক মন কেমন এসে জমা হত, অনেক কথাও। কিন্তু এই পাথুরে পরিবেশ, এই শব্দ, ধোঁয়া-ধুলো ,এর মধ্যে বৃষ্টি এসে সেই মনের আরাম দেয় না।তাই কথারাও আসে না।তাই এখানে আমি একা, ভীষন একা ,একেবারে একা। নিজে নিজেই রান্না করি, নিজে নিজেই খাই ।কখনো রান্না করি না, খাইও না। ঘরের সব কাজ নিজেই করি ,কেউ কিছু বলার নেই। হরেক রকম বই পড়া, খবরের কাগজ পড়া, গান শোনা, টিভি দেখা, সব একা একা। একাই গল্প পড়ি ,হাসি, কাঁদি, কিছুতেই সময় কাটে না। মাঝে মাঝে একাকিত্বের জন্য চোখ ফেটে কান্না আসে, নিজেই দেখি নিজের কান্না ,নিজেই মুছে ফেলি ।বাড়ির কথা মনে পড়ে। তক্ষুনি চলে যেতে ইচ্ছে করে ,সবার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে।বাড়ির, পাড়ার খবর জানতে ইচ্ছে করে। আমার ভীষণ প্রিয় কলকাতা শহরটায় ছুটে যেতে চায় মন। কিন্তু আমাকে একা বাড়িতে বিষন্ন ফেলে রেখে প্রতি সন্ধ্যাতেই ছটা পনেরোর লাস্ট ট্রেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস শব্দ করে ছুটে চলে যায় কলকাতার দিকে।চোখে জল এসে যায় অভিমানে। এই ভাবেই প্রতি সন্ধ্যাতেই ট্রেন মিস করে চলেছি ।প্রতিবারই সেই একই আফশোষ। কে আমাকে ট্রেন ধরিয়ে দেবে? অনেকদিন কবিতা লিখি না, এই পরিবেশে কবিতা হয়না। কবিতা সৃষ্টির মত, মনে কোন আনন্দ হয়নি ,বড়ই নীরস জীবনটা।এখন কবিতা শুধু পড়তে চেষ্টা করি, তাও বেশিক্ষণ ভালো লাগেনা ।কত ভালোলাগা কবিতা এইটুকু মনের পরিসরে জায়গা দিতে পারি না ।খুব খারাপ লাগে, কিন্তু জানি ,জীবন এরকমই। কতটুকু জায়গা হয়, কতটাই বা হাত গলে পড়ে যায়।
বৃষ্টি শুরু হল। সেই শব্দ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, ভালোবাসার যদি কোন রূপ থাকতো ,তাহলে তা যেন এই কালবৈশাখী ঝড়ের রুপই হয়। বিকেলে খোলা মাঠে একা আমাকে এসে যে জানিয়ে দিয়ে যাবে ,সে আছে এবং থাকবে। চুপিচুপি কোন মনের কথা, প্রাণের রেশ সেই ঝড়ের মুখ থেকেই ঝরে পড়বে হৃদয়ের সবচেয়ে দামি সম্পদের মতো ,অথচ যা বিলিয়ে দিতে একটুও দ্বিধা নেই ,লজ্জ্বা নেই, শঙ্কা বা অহংকার নেই ।ভালোবাসার যদি কোন রং থাকত ,তবে তা হতো সূর্যাস্তের গেরুয়া রং। দিনের শেষে জানিয়ে দেবার জন্য সবচেয়ে দামি সেই রঙ কোন বিভেদ মানে না, আকাশের প্রতিটি কোণে তার প্রকাশ জানিয়ে দিয়ে তবে সে বিদায় নেয়। আমাদেরও শুধু সেই রংয়েই হারিয়ে যেতে হবে একদিন ।ভালোবাসার যেমনই প্রকাশ হোক না কেন, তা আমার হাতের তালুর মতই  চেনা ,আমার সহজ জীবনবোধ ,সাবলীল আবেগের সঙ্গে কোথাও তার বিরোধ নেই ।সে যে আমিই। তাই ভালোবাসা আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে দামী অংশ, সবচেয়ে সত্য,সর্বদা অটুট এবং খুবই স্বাভাবিক ।তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। ভালোবাসার যদি কোন রূপ থাকত ,তা সেই অল্প চেনা পাড়াতুতো  প্রেমিকাতেই প্রকাশিত  হত,আর তো কেউ কখনো নেই আমার! ভালবাসার যদি কোন রং থাকত, তা তো তারই  সেই রং ,'হলুদ বসন্ত' পাখির সবচেয়ে নীল পালকটি। ভালোবাসা যদি ভুল হয় তো সেই , ভালোবাসা যদি জীবনের পরম প্রাপ্তি হয় তা হলেও সেই। একই সঙ্গে ভালোবাসার শুরু এবং শেষ, মায়া এবং বাস্তব ,প্রকাশ এবং প্রলয়। সেই আমার উন্মাদনা ও আবেগ, আমার পিটুইটারির খেলা ।তার জন্যই আমার দেহ মনের সমস্ত স্পর্শ সংরক্ষিত ,কেবল সেই তা অনুভব করতে পারবে একদিন।।তার- আমার হয়ত কোনদিনই সবুজ হওয়া হয়ে উঠবে না, তবু বলছি, দূর থেকেই বলছি ,কবিতার অনুরণন যে আমাকে পাগল করে তোলে, তা হয়তো বা সেই  একদিন প্রকৃত বুঝতে পারবে ,যেদিন হয়তো আমিই থাকব না। তখন কোন দুপুরবেলা হঠাৎ নীল আকাশে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট চিলটার দিকে তাকিয়ে, তার আমার কথা মনে পড়ে যাবে, আর তখনই ঠিক, তাকে কাঁদিয়ে যাবে আমার না লেখা কবিতা ।যদিও কবি পরিচয়ে আমি বিন্দুমাত্র গর্বিত বোধ করি না,কারণ আমি আদৌ কোনদিনও কবি হতে চাই না।বরং এও জানি,আমার না লেখা কবিতা সেই লিখবে-একদিন।
আমার একান্ত আপনার জনের বিষয়ে আমার আদৌ কোনো ভরসা নেই। আমি জানি সেই একজনকে আমি কোনদিনও পাবনা ।যে একদিন আমার হবে ,সে হয়ত কোনদিনই আমার কবিতা বুঝবে না ,দিন আনি- দিন খাই ভালোবাসার রাতে লাল নাইটল্যাম্পের তলায় শুয়ে নীরবে কেঁদে যাবে আমার কবিতা ।সেই একজন হতে পারত শুধু সেই  বর্ষপ্রেমিকা,অথচ নামহীন সম্পর্কের নদীতে ,পাতার নৌকা হয়েই সে হয়ত চিরকাল ভেসে যাবে ।তার কাছে থাকতে পারছি না,ইচ্ছে না হলেও বাধ্য হয়েছি তাকে কলকাতার পথচলতি ফুটপাতের কাছে ছেড়ে আসতে।সেখানে আমার কোনো জোর নেই, ভিড়ে হারিয়ে যাবার পর কত সহজেই, তার প্রতি আমার সব দাবী হারিয়ে যায় ।কিন্তু,সে কাছে থাকুক বা দূরে ,তার সংজ্ঞা ,তার স্মৃতি, আমার মনের সবচেয়ে দামি ঘরে তালাবন্ধ হয়ে আছে ,আর সেই ঘরের ভেতরে প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র আমার।
 বৃষ্টি শেষ হল। আকাশ নীল, সজীব হয়ে উঠেছে ।আমি তবুও খুঁজে চলেছি নিজেকে নতুন করে পাবার জন্য, যেমন সবুজ ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে দৌড়ে যাবার সময় কোন কিশোর নিজেকে খুঁজে পায়। তবু কেন আমি ধান ক্ষেতের মধ্যে বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকা সেই কাকতাড়ুয়া হয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছি ,কে জানে? আমি ভগবান মানি না ,তবে যে পদ্ধতিতে মানুষের সৃষ্টি ,সেই বিজ্ঞানের সূত্র ধরেই বলছি, বিজ্ঞান আমাদের যে দৃষ্টি দিয়েছে, যে মন দিয়েছে, তা সবার চেয়ে দামী ,যে আবেগ দিয়েছে , সৃষ্টিশীলতা দিয়েছে, লেখার হাত দিয়েছে,তা তো শুধু সেই বর্ষপ্রেমিকাকে  সারা জীবন ধরে বুঝবো বলেই।একথাই আমাকে আজ শান্তিতে রেখেছে, জীবনের সমস্ত ওঠা-পড়া,দুঃখ ,অভিমান একাকিত্বে পাশে থেকেছে, উৎসাহ দিয়েছে ,বলেছে আমার নাম আর আমার সমস্ত আবেগ, চেতনা আর বোধের মূল্য আছে ,প্রাণ আছে- আছে ভালবাসার টান- তার কাছে, যা কখনই শেষ হয়ে যেতে পারে না । এইসবই আমার জীবনের অপরূপ প্রকাশ, আমার হৃদয়ের উৎস এবং মোহনা, আমার পরিপূর্ণতা কেবল সেই আনতে পারে। এ ছাড়া আমার আর কিছুই বলার নেই। অল্প জানা প্রেমিকাকে কোনদিনও ভুলব না ,ভুলতে চাইও না। তারই সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আমার জুতোর সুকতলা তিনবার বদলাতে হয়েছে, ম্যানেজারের চোখরাঙানি সইতে হয়েছে, মাত্র সাতটা ছুটি বাকি থাকতেও দুটো ছুটি নিয়ে ফেলেছি সম্পূর্ণ বিনা কারণে ,এমনকি সাইকেলের রিম বেঁকিয়ে ফেলে কড়কড়ে  ছাব্বিশ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে মুরারী মিস্ত্রির কাছে। অপ্রস্তুতে পড়তে হয়েছে বন্ধুদের মাঝে, ধরা পড়তে হয়েছে এমনকি বাবা-মার কাছেও। তবু তাকে ছাড়িনি। বেদম মার খেয়েও তারই সঙ্গে থেকে গিয়েছি, থেকে যাবো, তাকে রেখে দেবো আমার মনে ।কিছুতেই যেতে পারবে না সে, এই বন্দীদশা চিরকালের ।এখানেই আমাদের সবুজ হওয়া। আমিও জানি, প্রকৃত প্রেমকে ঘরের বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় না।তাই  দূরে চলে যাবার মধ্যে যে ভীষণ আবেগ লুকিয়ে আছে, যে পাগল করা ভালবাসার মন কেমন করা আছে, তাতেই ভালোবাসার গুরুত্ব শতগুণ বেড়ে যায়। আরো ভালবেসে ফেলি সেই অবিনশ্বরীকে। তবু শেষমেষ তাকে বিদায় দিতেই হয়। সন্ধ্যে নামার আগে, সূর্যের শেষ আলোর মতো তার গেরুয়া স্নিগ্ধতার রং সাদা চোখে মুখে মেখে নিয়ে, তাকে হারাতে হয়।জীবনযুদ্ধে হার নয়,তা শুধু তার মনের কোণে নতুন করে জায়গা পাব বলেই ,আর হঠাৎ এক বর্ষার দিনে আকুল কান্নায় তাকে আবারও মনে পড়বে বলে।সেইখান থেকেই আমার আবার নতুন পথচলা শুরু হয়। পেছনে পড়ে থাকে সমস্ত স্বার্থান্বেষীদের কাতরোক্তি, লোভী আর হিংসুটেদের বড় লোলুপ চোখ, হিংসার রক্তাক্ত ছুরি।সমস্ত বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ,মলিকুলার ফিউশন আর ফিশনকে মাড়িয়ে চলি আমি, সমস্ত পাহাড়ের মধ্য দিয়ে আমি খুঁড়ে ফেলি সুড়ঙ্গ, এমনকি সমুদ্রের তলা থেকে কুড়িয়ে আনি মুক্তোঝিনুক, শুধু একজনকেই দেব বলে। এইভাবেই চলতে থাকে আমার জীবনযাপন ।সবাইকে পেরিয়ে নিমেষে চলে যাই অজানা লক্ষ্যে  আলোয় পথ ধরে, অমোঘ চোখের ডাকে।আমার চলা একদিন শেষ হবে, যেদিন জীবনের লক্ষ্যে আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে শুধু আমারই একটুকরো সবুজ দিন। সেই সবুজ বৃষ্টিতে আমি বুক পেতে দেব।আমার চোখ, মুখ, গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে,আমার সারা শরীর ভিজিয়ে ,আমার সবুজ হবার পালা ।
সেই সমাপ্তি তো একান্ত আমার নিজের, কিন্তু সেই নদীকে তো বাঁচতে হবে,তাকে তো আমায় হারাতেই হবে। সেদিন সে শেষবারের মতো আমাকে হারাবে, এমনকি আমিও হারাবো তাকে । আমি আমার হৃদয়ের নিঃশেষিত আবেগ আর অস্তিত্ত্ব,তার হাতে দিয়ে যেতে পারিনি ,শুধু তারই হতে পারিনি, তাকে কাছে টেনে নিতে পারিনি ।এই পথে চলতে চলতে, আমি আমার সীমিত হাতের তালুতে তাকে ধরে রাখতে পারিনি, আমার ছোট্ট ঘরের কোণে দুধেল বিছানায় তাকে নিয়ে যেতে পারিনি।এ আমার ব্যার্থতা নয়, এ হলো এই পথের ইতিহাস।তাই সে চলে গেছে তার নিজের ছন্দে, সুরে, জীবনবোধে ।সে যেন নদী হয়ে বয়ে চলে গেছে আমার তৃষিত বালুচর সবুজে ভরিয়ে দিয়ে।সে স্থান-কাল-পাত্র, জীবন-মরণ, পার্থিব-অপার্থিবের হাতের পুতুল নয়,সে চিরন্তনী বহমান,সে আবেগ সঞ্চারী চেতনার নদী, সে বর্ষা।
 আমার কাছে জীবনের বেশ কিছু অনুভূতির দাম এত বেশি যে তারা আমাকে আবেগ-বিহ্বল করে তোলে মাঝে মাঝে। সবখানেই একটা সুতোর টান থেকে যায়। যতই দূরে থাকি না কেন, ভীষণ চেনা হয়ে চিরকালের জন্য গেঁথে থাকে সেই অনুভূতিগুলো ,সেই স্মৃতিগুলো ।সেই ভালোবাসার টান আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। পাগল করে দেয়, তাড়িয়ে বেড়ায়,আর আমার জৈবিক দিন গুজরানের ফাঁকে ফাঁকে ভালবাসার দাম দিতে গিয়ে নিজেকেই পাছে হারিয়ে ফেলি, এই ভয়ে আমি নিজেই মাঝে মাঝে কেটে দিই সেই আবেগ নির্ভর স্মৃতির সুতোগুলো। মুক্তি পেয়ে আমি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচি ।একটু অন্যরকম আমি হয়ে আমি আসলে বাঁচিয়ে রাখি আমাকেই। প্রতিবার তাই নিজেকে আবার নতুন করে খুঁজে পাই ,নতুন করে নিজেকে ভালোবাসতে পারি, নতুন করে লিখতে পারি কবিতা ।বর্ষার জলের মত জীবনে আসুক প্রেম, বদ্ধ জলাশয়ের মত নয় ।জীবনে ভালবাসার গুরুত্ব প্রচন্ড বেশি উপলব্ধি করি বলেই বোধহয় আমি এই কথা বলতে পারি।
খুব ছোটবেলার কথা মনে পড়ে ।মায়ের সঙ্গে স্কুল থেকে ফেরার কথা ,সেই সরকারপাড়ার ঢালু রাস্তা, সেইসব পুকুর ,পুকুরে বাবার সঙ্গে সাঁতার শেখাও মনে পড়ে। ছোটবেলার কথা মনে পড়লেই মনটা খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে। অনেক কিছু ফেলে আসা দুঃখ এসে বড়ই আঘাত করে। বারবার মনে হয়, সেসব কেন আর কখনো ফিরে পাবোনা ?কেন তারা হারিয়ে যাবে চিরকালের মতো? শুধু স্মৃতির পাতায় তারা মাঝেমধ্যে চকচক করে ওঠে , মনে পড়ে ,আর তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়। হারিয়ে আমি আজও ফেলছি অনেক কিছুই ,সেই দামাল প্রেমকে হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে কিন্তু দ্রুতগতিতে, কলকাতা থেকে দূরে থাকতে থাকতে। প্রতিদিনের চেনা শহরটার সঙ্গেই আর তাল রাখতে পারছি না ।ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছি আমি প্রিয় শহর, প্রিয় বন্ধুরা আর প্রিয়তমা থেকে। সরে যেতেই হবে ,দূরে থাকতে থাকতে  পারিপার্শ্বিকের স্মৃতিতে এভাবেই ক্রমশ ফিকে হয়ে যাব আমি, আমার স্মৃতিতে পৃথিবী ।শুধু কোন এক বর্ষার দিন রাস্তার দিকে তাকিয়ে ,বৃষ্টিতে কাক ভেজা কোন একটা লোককে চলে যেতে দেখে, হয়তো ভীষণ কান্না পাবে ,এই কলকাতা থেকে এত দূরে থাকলেও। এ কথা ভাবলেই বড় দুঃখ হয়, হারিয়ে ফেলার ভয় হয়, এবং হারিয়ে আমি সত্যিই ফেলছি। প্রেম, ভালোবাসা, এইসব স্মৃতি,সব স্থির ধ্রুবতারার মতো, সেইটাকে যত্ন করে ধরে রাখতে চাই ।তাই আমার ভালোবাসা ঠিক এখানেই শেষ হয়ে গেছে ,সারা জীবনের মতো স্থির হয়ে আছে সেই অনুভব ।
আমি যে কে পৃথিবীর, তা সময়ের চিঠিতে লেখা থেকে যাবে,এইটুকুই স্বস্তি।আমার তাই কোন দুঃখ নেই,কারণ
 পাওয়া এবং হারানো এ দুই'ই আমার কাছে ভালবাসার রূপ। ভালবাসা হল মোমবাতির আলোয় দেখা চেনা মুখ , ভালোবাসা হল বুক দিয়ে ধরে নেওয়া বৃষ্টির ফোঁটা, ভালোবাসা হল ইউক্যালিপটাস গাছ, ভালোবাসা হলো আঠাশে এপ্রিল ,বিদায় দেবার চোখের জল আর হেরে বাড়ি ফিরে শাওয়ারের জলে স্নানের সময় মিশে যাওয়া সারা জীবনের কান্না।ভালবাসা কখনো কফি হাউজের কোণের টেবিল,বাটার সামনে প্রতীক্ষা, এমনকি ভালোবাসা আমার কাছে স্বপ্নে দেখা মানবীর সঙ্গে দেখা না হওয়া পুরো সতেরোটা বছর। তবু আজও যখন মনে পড়ে তার কথা, তখন মন কেমন করে ,মন ছুটে চলে যায় ,কিন্তু কখনই বাস্তবিক শারীরিকভাবে  তার কাছে যাওয়া যায়না, সে থেকে যায় চিরকালের জন্য অধরা।আমিও অবশ্য হতে পারিনি  তার মনের কল্পিত প্রেমিক পুরুষ। আমি জানি আমার মধ্যে এমন কিছু নেই, যা তার চিরনতুন মনের অসম্ভব আবেগ আর জটিল ভালোবাসার বিমূর্ত্ত প্রতীক হতে পারে।
আমি বড় বেশী আবেগপ্রবন, কিন্তু আমি আবেগে ভেসে যেতে দিইনা নিজেকে,সংযত করে রাখি ।প্রয়োজনে কঠোর হই। নিজের আবেগ আর হৃদয়ের উন্মাদনা গুলোকে মেরে ফেলে মাঝে মাঝে আমি নিজেকেই বাঁচিয়ে দিই, নইলে আমি শান্তি পেতাম না ।আমি জানি এবং দেখেছি দূরত্ব বাড়ে এবং ঠিক তাই ।হারিয়ে ফেলা সত্যিই ভীষণ দুঃখের, ভীষন কষ্টের ।কিন্তু এই কষ্ট পেতে চাই না বলেও তা পেতেই হয়, পেতে হয়েছে এবং পেতে হবেও। যেমন এখন পেতে হলো ।এইসব ফ্যাকাশে দুরছাই দিনগুলোও দেখতে হল। কিন্তু তা সত্বেও এই দেখো আমি তো ঠিক বেঁচে আছি ।কবিতা লেখা হয়তো বন্ধ হয়েছে ,কিন্তু জীবন এগিয়ে চলেছে।শুধু একটা অভিমান,এতদিন পরেও সেই ছদ্মবেশিনী একইরকম অচেনা,অজানা।এ শুধু চলে যাবার সময় আমার দুঃখময় উপলব্ধি নয়,এ আমার হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস।অনেক কিছু জানা হলনা,আর হয়ত কোনদিনও হবেনা।একদিন আসবে,যখন আর কোনদিনও দেখা হবে না,কালের গহ্বরে হারিয়ে অনেক দূর চলে যাব আমরা, সেইসঙ্গে এইসব প্রশ্নও মিলিয়ে যাবে চিরকালের মত।যা করতে পারলাম না,যা বলতে পারলাম না,যে চিঠি কোনদিনও তার হাতে পৌঁছল না,তা শেষপর্যন্ত হয়ত ভালোর জন্যই হয়েছে।আমার দুঃখ এই দূরত্বের জন্য,এই জীবনযাপন,এই সমাজব্যবস্থার জন্য,যা বদলাবার আগেই সম্পর্কগুলো হারিয়ে ফেলব আমি,জীবনটা এতই ছোট আর দ্রুত। এই চলে যাবার যদি ক্ষমা থাকে কোন,মনে মনে  ক্ষমাপ্রার্থী আমি।আমি জানি,আমি নই, আমি হতে পারিনি ,সেই আদর্শ প্রেমিক পুরুষ হতে। থাকি না আমি সেই অন্যরকম অসম্পূর্ণ পুরুষ হয়ে ,আমার কবিতার মধ্য দিয়ে ?এই সামান্য অথচ সারাজীবনের মনের কথাটা সবচেয়ে আগে একমাত্র সেই স্বপনচারিণীই বুঝতে পারবে, যখন আমি থাকবো না তার চোখের মাঝে। সেদিন সেই প্রেমকাহিনী আমায় জানাবে তো বর্ষা?
সব কথা বলা শেষ হল।বৃষ্টিশেষের ঠান্ডা হাওয়ায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনটা বোধহয় শান্তি পেল একটু।তারই মধ্যে দেখতে পেলাম ইউক্যালিপটাসের পাতাগুলো সবুজ থেকে আরো সবুজ হয়েছে।





🔸প্রবন্ধ:


           🔰শেখ আসমত 🔹পূর্ব মেদিনীপুর🔹

📚যে কবির কাব্যে মৃত্যুঞ্জয়ী চির-যৌবনের জয়ধ্বনি শুনেছিলাম, শুনেছিলাম অগ্নিবীণার সুর-ঝংকার,যিনি ধীর -স্থির অচঞ্চল বাংলা কাব্যে ব'য়ে এনেছিলেন দুর্বার কালবৈশাখীর  ঝড়, সেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামই আমার প্রিয় কবি। তিনি তো এই পরাধীন জড়তাগ্রস্ত সমাজের বুকে সঞ্চারিত করেছিলেন নব যৌবনের শোণিত ধারা । তাঁর কবিতা গুলি নব ভারতের সঞ্জীবনীর মন্ত্র,তাঁর সংগীত সর্বহারাদের কান্নার বাণী । তাঁর সংগীত ও কবিতায় সেদিন নবযৌবন জলতরঙ্গের বিপুল আবেগে নেচে উঠেছিল "হিমালয় চাপা প্রাচী । " বিদ্রোহের জয়ধ্বজা উড়িয়ে ধূমকেতুর মতো নজরুল ইসলাম দুর্বার পদবিক্ষেপে রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠা ভূমিতে আবির্ভূত হলেন। তাঁর বিদ্রোহী কবিতাটিই, প্রকৃতপক্ষে বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে তার প্রবেশের প্রথম ছাড়পত্র স্বরূপ । উদাত্ত কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করলেন--" বল বীর- বল, উন্নত মম শির, শির নেহারি, আমারি নতশির ঐ শিখর হিমাদ্রির । বল বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি' চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি' উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর ।"কেবলমাত্র এই বিদ্রোহী কবিতাতেই বাংলা কবিতার আসরে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত হলেন । কবি নজরুল হলেন বাংলার বিদ্রোহী কবি ।বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রাম । ধর্মপ্রাণ দরিদ্র পিতা নাম রেখেছিলেন দুখুমিঁয়া । পিতৃবিয়োগের পর কবি কিশোর নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েন এবং অল্প বয়সেই তাকে হতে হয় গ্রামের মক্তবের মৌলবী ও মসজিদের তরুণ ইমাম । এই সময়ে লেটো গানের দলে গান রচনা ও সুর- সংযোজনার প্রয়াসের মধ্যে নজরুল প্রতিভার প্রথম বিকাশ পরিলক্ষিত হয় । পরে,রুটির দোকানে চাকরি ও সিয়ারশোল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি- এ সবই নজরুলের জীবনের চমকপ্রদ ঘটনা । কিন্তু তার চেয়েও চমকপ্রদ ঘটনা হলো তাঁর বাঙালি পল্টনে যোগদান ।  কারও  মতে, তিনি করাচি পর্যন্ত গিয়েছিলেন; কারও  মতে, মেসোপটেমিয়ায় । সে যাই হোক, সেনাবাহিনীতে যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে তিনি হাবিলদার পদে উন্নীত হন। প্রথম মহাযুদ্ধের অবসান হল । ছাঁটাই এর খাতায় নাম উঠল নজরুলের । মনে মহাযুদ্ধের স্মৃতি এবং হৃদয় পরাধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দাবাগ্নি বহন করে দুদ্দাড় আবেগে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে এলেন বাংলার "হাবিলদার" -কবি । এবার তিনি বিদ্রোহের বহ্নিচ্ছটা নিয়ে বাংলা কবিতার আসরে অবতীর্ণ হলেন। পুরাণ- কোরআন- গীতা -মহাভারতের গভীর জ্ঞান এবং আরবি-ফারসি -সংস্কৃত- বাংলা শব্দ ভান্ডার এর দুর্লভ চাবিকাঠি ছিল তাঁর হাতে । আর ছিল উদাত্ত কণ্ঠ এবং রাগ-রাগিণীর জ্ঞানের সঙ্গে বাংলার কীর্তন- বাউল -সারি- ভাটিয়ালির  প্রতি প্রাণের টান ও সেই সঙ্গে ফরাসি গজলের  প্রাণ মাতানো সুর- বাহার । নজরুল চিরযৌবনের কবি ।  প্রাণ-প্রাচুর্যই  যৌবনের নিশ্চিত প্রাণ- লক্ষ্যণ । প্রথম মহাযুদ্ধের পর আশাভঙ্গ হেতু সেই যৌবন বিদ্রোহ ধর্মী । রক্তাক্ত কাপালিকের মতো সর্ব -শোষণ - শাসন -শৃঙ্খলা সবলে ভাঙবার দুর্জয় সাধনায় সেই যৌবন নির্মম ব্রতচারী । নজরুলের কাব্যে শোনা গেল সেই বিদ্রোহী যৌবনের  নির্বোধ পদধ্বনি । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও বিস্মিত স্নেহে তরুণ নজরুলকে স্বীকার করে নিলেন । বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে নজরুল দেখলেন, দেশব্যাপী পরাধীনতার নীরন্ধ্র অন্ধকারে, ধনিক শ্রেণী ও সাম্রাজ্যবাদীদের নির্লজ্জ শোষণে সমগ্র সমাজে রচিত হয়েছে এক বিশাল শ্মশানভূমি । তিনি উদ্ধত কাপালিকের মতো সেই । শ্মশানভূমি তে উচ্চারণ করলেন শব - সাধনার ভৈরবী মন্ত্র--" কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী ।"বজ্র গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা করলেন-- " আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ । " কারণ 'সোহহং '-আমিই সেই । আমার ললাটে ঈশ্বরের আশীর্বাদে ললাটিকা; আমি কারও  কাছে মস্তক অবনত করতে পারিনা ।মানুষ যতদিন অজ্ঞতার অন্ধকারে বন্দি থাকে, ততদিন সে নিজেকে চিনতে পারে না, সন্ধান পায় না নিজের শক্তির । কবিতায় বললেন-' আমি সহসা আমারে চিনিয়া ফেলেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ ।" আত্মশক্তির সন্ধান লাভ করলে পরাধীনতার বন্ধন আর স্থায়ী হয় না । কবির  বিদ্রোহ যেমন পরাধীনতার বিরুদ্ধে,তেমনি তাঁর  বিদ্রোহ সামাজিক অসাম্যের  বিরুদ্ধেও । তাঁর দৃষ্টিতে  সমস্ত সামাজিক ভেদাভেদই  কৃত্রিম এবং মিথ্যা । তিনি বললেন-' ও কি চন্ডাল! চমকাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র,ওই শ্মশানের শিব!' সামাজিক কুসংস্কার, জড়তা ও ক্লান্তি কর  নৈষ্কম্মের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো তিনি আগনি বিদ্রূপ বান নিক্ষেপ করে আবেগ মথিত কণ্ঠে বললেন-  ' মেনে শত বাধা টিকটিকি হাঁচি টিকি দাড়ি নিয়ে আজও বেঁচে আছি বাঁচিতে বাঁচিতে প্রায় মরিয়াছি,এবার সব্যসাচী, যা হোক একটা তুলে দাও হাতে,একবার মরি-বাঁচি'তাঁর অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, সর্বহারা, ফনিমনসা প্রভৃতি  কাব্য গুলির মধ্যে শুনি ব্যাথার্ত বিদ্রোহেরই সোচ্চার জয়ধ্বনি । দেশে তখন একদিকে স্বাধীনতার আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে তেমনি বিদেশির  চক্রান্তে মাথা তুলে উঠেছে হিন্দু-মুসলমান সমস্যা। স্বাধীনতা সংগ্রামের কান্ডারী কে ডেকে তিনি আদেশ করলেন-
  " হিন্দু না ওরা মুসলিম,ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ,সন্তান মোর মার" এইভাবে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি মিলন মন্ত্র রচনা করে গিয়েছেন তিনি ।  নজরুলের কাব্য তাই হিন্দু মুসলমানের পবিত্র মিলন তীর্থ ।অন্যদিকে,সাম্রাজ্যবাদীর নিষ্ঠুর শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী করেছে বিদ্রোহের দুরন্ত অগ্নি উদগা । সাম্রাজ্যবাদীর পেষণ চক্র তলে নিষ্পিষ্ট মানবাত্মার আকুল ক্রন্দনধ্বনি তিনি শুনেছেন । তাই তিনি ব্যথাহত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন-" বন্ধুগো,আর বলিতে পারিনা বড় বিষ জ্বালা এই বুকে,দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে ।রক্ত ঝরাতে পারি না তো একাতাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা-প্রার্থনা করো, যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাসযেন লেখা থাকে আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ।"নজরুল সেই রক্ত লেখার কবি,সেই ব্যথিত মানবত্মার  কবি, আমার প্রিয় কবি । হাজার ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট বিদ্রোহী কবি ঢাকায় ইহলোক ত্যাগ করেন । ভারতে তাঁর  মরদেহ আনবার  সকল প্রয়াস ব্যর্থ হয় । শুধু তাঁর  কবরের একমুঠো মাটি বর্ধমানের চুরুলিয়ায় কবিপত্নী প্রমিলা ইসলামের কবর ভূমিতে এসে পৌঁছায়।  তিনি তো বিদ্রোহী যৌবনের কপালে জয় তিলক এঁকে  দিয়ে তাকে দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার উত্তরণের মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের একগুঁয়েমির দুর্লঙ্ঘতা তিনি আর লংঘন করতে পারেনি ।সমগ্র জাতি নজরুলের কবি প্রতিভার কাছে ঋণী রইল অসীম ঋণে ।      
               ----------------------------------------------

🔸অণুগল্প:


       ๑মিনাক্ষি ঘোষ🔹খারাদি, পুনে 🔹
                 

   
📘সোমঋতার আজ অফিস থেকে বেরোতে বেশ অনেকটা দেরীই হয়ে গেল। লিফটে নামতে নামতে মনে হলো রোহন তো এখনো ফোন করলোনা।  ওহ্হো আরে মিটিংয়ের পরে মোবাইলের সুইচটাইতো অন করা হয়নি। আজকাল এই  এক জ্বালা হয়েছে। নির্ঘাৎ রোহন ফোন করেছিল। তবে ওয়েট  নিশ্চয়ই করবে পার্কিংয়ে।  ছুটির পর ঘন্টাখানেকই মাত্র হয়েছে। আজকের মিটিংটার কথা ওকে তো জানানোও হয়নি আসলে মিঃ অসওয়াল উইদাউট এনি নোটিস মিটিংটা সেট করলেন । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই এগোলো পার্কিংয়ের দিকে। খুব বেশীএকটা গাড়ী নেই তবু তার মধ্যেই চোখ চালিয়ে খুঁজলো হলুদ রঙা ডাটসুনটাকে। উহুঁ এদিকেতো নেই। আরেকটু এগিয়ে বাঁদিকের পার্কিং স্পেসেও চোখ বোলালো। নাঃ কোথাওতো দেখা যাচ্ছেনা। চলে গেল? ফোন সুইচ অফ দেখলে রিসেপশনেওতো খোঁজ নিতে পারতো।  এমনতো আগেও হয়েছে কয়েকবার । নট রিচেবল দেখে রিসেপশনে এসে বসে থেকেছে। কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখলো নটা দশ।  ওলা বুক করতে গিয়ে দেখলো শেয়ার ক্যাব আছে একটা । বেশীক্ষণ দাঁড়াতে হলোনা। একটা ক্যাব এসে দাঁড়ালো সামনে। গাড়ীর নম্বরটা আর ওটিপিটা মিলিয়ে উঠে পড়লো। এখনো তো ফোন এলোনা রোহনের।আরো একবার কল করলো রোহনকে। নাঃ এবারও সুইচড অফ। 
গাড়ীটা রাস্তায় পাশে সাইড করে দাঁড়িয়েছে। একটু এগিয়ে গলির মধ্যে বাড়ী। চোখ দোতলার ব্যালকনির দিকে। ব্যালকনির দরজা খোলা তার মানে রোহন এসে গেছে। অথচ ব্যালকনিতে ওর অপেক্ষায় দাঁড়িয়েও নেই। রোহন কি আজকাল একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে? উদাসীন হয়ে পড়ছে সোমঋতার প্রতি? তিনবছরের প্রেম আর আড়াই বছরের বিবাহিত জীবনে এত তাড়াতাড়ি ক্লান্তি এসে গেল ওর?একবুক উৎকণ্ঠা আর একরাশ অভিমান নিয়ে চাবি ঘুরিয়ে লকটা খুললো সোমঋতা। অন্ধকার ঘর। হাতবাড়িয়ে সুইচবোর্ডের দিকে আলো জ্বালতে যাবে হঠাৎই আলো ঝলমল করে উঠলো ঘরটা।  আর পেছনে চির পরিচিত হাতের বাহুবন্ধন।  সারা ঘর ফুলে ক্যান্ডেলে সাজানো।  সামনের ছোট সেন্টার টেবিলে রাখা বার্থডে কেক।  নিজের দিকে টেনে মুখটা সোমঋতার মুখের কাছে নামিয়ে আনতে আনতে ফিসফিস করে বললো রোহন ”হ্যাপি বার্থডে ঋতু ।”
একরাশ জল আর খুশীতে দুই চোখ চিকমিক করে
উঠলো সোমঋতার ।

    
✍বিকাশ চন্দ🔹পূর্ব মেদিনীপুর🔹
                      
            


🔰নীরব প্রার্থনা বোঝেনি তেমন শালগ্রাম শীলা
হাতে হাত চিরস্থায়ী ঠোঁটে ঠোঁট অধরা স্পন্দন, 
হয়তো বুঝে ছিল উন্মুক্ত কাল নিভৃত উপত্যকায়---
নক্ষত্রের গতি বোঝা ভার তবুও ডুবে যাই বালুকা বেলায়। 

এফোঁড়ওফোঁড় অলঙ্করনে সাজো নক্সিকাঁথা---
তবুও এক সময় সকলে বুঝে যায় সকল পরিধি জীয়ন্তে মরণ,
সেই সব আদি কাল অনন্ত বৈভব অধরাই থাক---
তবুও দিনের পরিণতি সান্ধ্য বাসরে বেজে ওঠে শাঁখ। 

জীবনের রাগ রোষ বহুবার দেখেছে উড়ে চলা ধূলো ছাই
আঙুল ছোঁয়া শিশুরা তবু চেপে ধরে প্রাণের ভরসা,
হয়তো বা এমনই ঘটে সচেতন স্বভাব অপরাধ----
কখনও নষ্ট হয়নি কোন অকাল নক্ষত্র দোষের বিলাপ। 

দাও মুক্তি নাও মুক্তি এভাবেই বাঁধনে বিশ্ব চরাচর,
অবসৃত জীবন কাল কেউ ধরে বসে নেই প্রভুর সাধনা--
গৌরীপট ছুঁয়ে আসে কত শত প্রতিমার হাত, 
তবুও বিচ্ছিন্ন সময় কখনও তো ফিরে দেখা আলো অন্ধ রাত।


🔸মুক্তগদ্য 
                       
                        ๛ সুকান্ত মণ্ডল 🔹মালদা 🔹



☘ গ্রীষ্মকাল। এমনিতেই খুব গরম। বিকেলের চা খাচ্ছি। চা খেতে খেতে ঘেমে একেবারে স্নান করে নেওয়ার মতো অবস্থা। বাবা বললেন, 'চল্ নদীর দিক থেকে ঘুরে আসি, শরীরও ঠান্ডা হবে আর মনও।' হাঁটতে হাঁটতে আমরা দু'জনে নদীর পাড়ে গিয়ে হাজির। ঘাট থেকে একটু দূরে ঘন দূর্বাঘাস খুঁজে বসে পড়লাম। ঘাটের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখি একটি মাঝি তার সারাদিনের কাজ শেষে ডিঙিটাকে ডাঙায় বাঁধছে। সারাদিনের মৈথুন শেষে সূর্য তার লজ্জায় লাল হয়ে ওঠা মুখ পাহাড়ের খাঁজে লুকোচ্ছে। আকাশে পাখিরা নিজের বাসায় ফিরে আসার যাত্রা শুরু করেছে। চারিদিক নিঃশব্দ ও নিস্তব্ধ। শুধু নদী তার নিজস্ব শব্দে ও ছন্দে প্রবাহিত। স্নিগ্ধ প্রকৃতির বুকে আমরা বিভোর হয়ে আত্মমগ্ন। হঠাৎ সমস্ত নিস্তব্ধতাকে ছিন্ন করে বাবা বলে উঠলেন, "ওরে তোরা কি জানিস কেউ / জলে কেন ওঠে এত ঢেউ / ওরা দিবস-রজনী নাচে, / তাহা শিখেছে কাহার কাছে...।" দীর্ঘ আবৃত্তিটি শেষ হতেই আমি জিজ্ঞেস করি, 'বাবা এটা কার লেখা?' একবুক ঠান্ডা বাতাসে দম নিয়ে বললেন, "রবীন্দ্রনাথ।"

এই রবীন্দ্রনাথের সাথে আমার প্রথম পরিচয় বাবার হাত ধরেই। সেইদিনটির কথা এখনও খুব স্পষ্ট মনে পড়ে। আমাদের গ্রামের লাইব্রেরীতে ২৫ শে বৈশাখ উপলক্ষ্যে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। বাবা ছিলেন তখন সেই লাইব্রেরীর সেক্রেটারী। আমার বয়স তখন তিন বা সাড়ে তিন। স্কুল যাওয়া তখনও শুরু হয়নি। বাবা আমাকে "মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি" ছড়াটি মুখস্ত করিয়েছিলেন। আমি হাত নেড়ে নেড়ে মঞ্চের উপর আবৃত্তিটি করেছিলাম। মঞ্চের একপাশে টেবিলের উপর সাদা চুল ও সাদা দাড়িওলা বুড়ো মানুষটার ছবিতে মালা দেওয়া দেখে আমি বাবার কাছে জানতে চেয়েছিলাম বুড়োটা কে। বাবা একগাল হাসি নিয়ে বলেছিলেন, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইনিই হলেন আমাদের বিশ্বকবি, রবীন্দ্রনাথ।" স্কুলে ভর্তির পর যত উপরে উঠেছি রবীন্দ্রনাথকে তত নতুন করে জানতে শিখেছি।

অনেক পরে জানলাম শান্তিনিকেতনের কথা। রবীন্দ্রনাথ একটি লেখায় বলেছেন, "অন্ন চাই, প্রাণ চাই, চাই মুক্ত বায়ু / চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।" পরিবেশ অনুকূল না হলে তাঁর ওই চাওয়া যে পাওয়ার রূপ নেবে না তা তিনি ভালোভাবেই বুঝেছিলেন। আর এজন্যই প্রকৃতির মাঝে গড়ে তুলেছিলেন 'ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড়' শান্তিনিকেতন। শহুরে মানুষেরা রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে চিনতে শিখলেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভালোবাসতে শিখলেন প্রকৃতি। না, আমাকে নতুনভাবে প্রকৃতিকে চিনতে হয়নি। 'ছায়া-সুনিবিড়' ভূতনী দিয়াড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশেই আমার বেড়ে ওঠা। বাবার হাত ধরে আমি অনুভব করতে শিখেছি প্রকৃতিকে। রবীন্দ্রনাথের মতো করে ভালোবাসতে শিখেছি প্রকৃতিকে। না, আমি কখনও শান্তিনিকেতন যাইনি। কখনও কোপাই নদীর কূলে ঘুরিনি, ময়ূরাক্ষীতে স্নান করিনি। তবে বাবার হাত ধরে আমি ফুলাহারের পাড়ে ঘুরেছি। গঙ্গার স্নিগ্ধ জলে স্নান করেছি, সাঁতার কেটেছি, গামছা দিয়ে মাছ ধরেছি। আমি শান্তিনিকেতন দেখিনি ঠিকই, তবে ভূতনী দিয়াড়ার মাটিতে বসে খুব স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারি শান্তিনিকেতনকে।

মনের শান্তি নিয়ে তো শুধু বড় হওয়া যায় না। বড় হতে গেলে দরকার সঠিক শিক্ষা। আর এই শিক্ষা গ্রহণের জন্য 'শান্তিনিকেতনে'  না পারলেও বাবা আমাকে ভর্তি করলেন 'শিক্ষানিকেতনে' (মানিকচক শিক্ষানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়)। নামদুটোর মধ্যে সিমিল্যারিটি দেখে আমার মন নেচে উঠেছিল। "হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচে রে...।" অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। ক্লাস সিক্সের বাচ্চা ছেলেটি প্রথম 'ঘর' থেকে 'বাহির' হলো। একটি মেসে আমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সেই সময় রবিঠাকুরের 'জীবনস্মৃতি' উপন্যাসটি কিনে দিয়ে বলেছিলেন, 'কখনো ভালো না লাগলে বইটি পড়িস।' বাড়ি ছেড়ে প্রথম একা। এমনিতেই মন খারাপ। বাবা বলেছেন মন খারাপ করলে বইটি পড়তে। সত্যি বলতে বইটির 'ঘর ও বাহির' অধ্যায়টি পড়ে আমার মন আরও খারাপ হয়েছিল। বাড়ি যাওয়ার জন্য কেঁদেছিলাম। এইভাবেই একটু একটু করে রবীন্দ্রনাথ ও আমার বাবাকে আমি জেনে যাচ্ছি।

'ঘর ও বাহির'  করতে করতে আজ আমি এখনও 'বাহিরে'। বাড়ি গেলেই বিভিন্ন বিষয়ে বাবার সাথে আলোচনা করতে আমার ভালো লাগে। তিনি বই-পাগলা মানুষ। কখনও কখনও মা একপ্রকার রাগ ও অভিমান বসত বলে ফেলেন, 'তোর বাবা মাধ্যমিক দেবে---ফাইনাল ক্যান্ডিডেট।' বাবার টেবিলে বিশেষত মার্ক্সবাদের বইপত্রই বেশী। আমি তখন ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ি। একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'বাবা, মার্ক্সবাদ কী?' তিনি আমাকে বললেন, "রবি ঠাকুরের 'দুইবিঘা জমি' পড়েছিস?" ----হ্যাঁ। "এই 'দুইবিঘা জমি'র জমিদার হলো 'ব্যুর্জোয়া' আর উপেন হলো 'প্রোলেট্যারিয়েট' মানে সর্বহারা। এই ব্যুর্জোয়াদের কাছ থেকে সর্বহারাদের মুক্তির মতবাদই হলো মার্ক্সবাদ।" 

এই রকমই এক কথা প্রসঙ্গে আমি বললাম, 'বাবা, রবীন্দ্রনাথকে অনেকে কিন্তু দানবীয় আত্মার সাথে তুলনা করেন। এতে তোমার মতবাদ কী?' বাবা যে কথাগুলো বললেন তার সারসংক্ষেপ ঠিক এইরকম---- এটি সত্য যে বিশ্বের সমস্ত ঋষির কোনো একটি গুণ হল ঈশ্বর-সদৃশ হয়ে ওঠা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতো ঈশ্বর-সদৃশ ব্যক্তির কাছে সব জায়গায় তাঁর প্রতিভা এবং ব্যপ্তি প্রকাশের জন্য তাঁর ভারতের অন্য কোনো ঈশ্বর-পুত্রের অনুকরণ করার প্রয়োজন ছিল না। তাঁর জীবন-যাত্রা মরুভূমির মতো অন্তঃসার শূন্য শুধুই একজন তপস্বীর মতো ছিল না। তপস্যা-ব্রত এবং কঠোর সাধনা স্ব-মুক্তিলাভের এক পুরাতন পদ্ধতি, এবং প্রকৃত তপস্যা-ব্রত আজও গভীর শ্রদ্ধার অবকাশ রেখে যায়। এই সাংসারিক জগতে থেকেও সারাজীবন তাঁর নিজের কর্ম এবং কর্তব্যের সমাধান করা খুবই কঠিন এবং তা সমানভাবেই সাধক-তুল্য জীবন-ধারণ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের দৃঢ় বিশ্বাসে এই পৃথিবীর সমস্ত বস্তু-কেন্দ্রিক মায়ার মধ্যে থেকেও সারা-জীবন এইসবের অনেক ঊর্ধ্বে বিচরণ করে গিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতাগুলির মধ্যে থেকে একটি পংক্তি মনে করে বাবা বললেন, "বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়"; এই পংক্তিটিতেই তাঁর জীবন-দর্শন কী স্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত, ভাবলে আমাদের অবাক হতে হয়। তাঁর জীবনের মূল কথা ছিল, জীবন কোনো ত্যাগ বা বিসর্জন নয়, বরং অধিকার ও বিজয়।

রবীন্দ্রনাথকে যেভাবে আমি একটু একটু করে আবিষ্কার করি তেমনভাবে বাবাকে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সবার ঈশ্বর, ঠাকুর। বাবার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথকে যেভাবে জানি, রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে বাবাকে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথই আমার ঈশ্বর, আমার ঈশ্বরই আমার বাবা আর আমার বাবা-ই আমার রবীন্দ্রনাথ।

"ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।"
      
                  -------------------------------------------


   ๛Jayeeta Banerjee🔹Purbo Burdwan🔹



ꗇ Slowly You will be an image to me like a setting sun,
Tried to Love you core from my heart,
Tried to fill your life with fragnance,
Tried to be your heartbeat,
But, in vain, I fell down and never rose.
I lost you, I lost your love,
But, I can feel you in me.
My grave would wait for your footsteps,
And I would wait to see your face to say 'adieu'...

🔹অণুগল্প:

     📚সুজিত কুমার মালিক🔹আরামবাগ🔹

🔰মা-বাবা দুজনেই চাকুরিজীবী। তাই স্কুল থেকে ফিরে মামাবাড়িতে রাজত্ব চলে দিদানের প্রিয় পুচকুর। দুপুরে দিদানের হাতে ভাত খাওয়া সেরে তিনজনে মেঝেতে বিছানা করে বিশ্রাম নেয়। দাদুভাইয়ের গায়ে পা তুলে দিদানের কাছে গল্প না শুনলে ঘুম আসে না পুচকুর।তিনজনেই যেন সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে ওই সোনালী দুপুরের জন্য।
           দাদুভাইয়ের বয়স হচ্ছে। তাই প্রতিদিন মেঝেতে বিছানা করতে খুব কষ্ট হয় এখন। জায়গার সমস্যার জন্য পুরানো ঘরটা মেরামত করে দুই পাশে দুটো খাটের ব্যবস্থা হলো। নতুন ঘরে দুটো খাটের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে পুচকু। দাদুভাই বলে-কি হলো? এই দিকে আয়।পুচকু-তোমাদের নতুন ঘর খুব বাজে! তোমাদের নতুন ঘর আমাদের তিনজনকে আলাদা করে দিলো। দাদুভাই উদাস দৃষ্টিতে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। টপ টপ করে ঝরতে থাকা দিদানের চোখের জল,বিচ্ছেদের আলপনা আঁকতে থাকে...





              🔰সাত্যকি🔹উত্তর ২৪ পরগণা🔹

🔵মেঘ জন্ম রোজ ফিরে ফিরে আসে
হাতে হাত পায়ে পা রেখে
উসখুস করে
আমরাই চিনে নিতে ভুল করি

আমরা এখন আর মেঘ চাই না
এখন সরাসরি বৃষ্টির কথা ভাবি
তাকে পেড়ে এনে বারান্দায় বসাই
জানলায় ঝুলিয়ে রাখি
তারপর লোক ডাকি হাঁ হাঁ করে আসে
আমরা প্রশংসা কুড়িয়ে দেরাজে তুলে রাখি

এখন আর মেঘ জন্মে  ফিরে যেতে চাই না
ভালবেসে বৃষ্টিকে ফ্রেমে আটকে রাখি । 



           🔰তারাশংকর চক্রবর্তী 🔹বাঁকুড়া 🔹


🔵বৃষ্টির সূচি ঘোষিত হয়েছে 
ভরা আষাঢ়ের মেঘে
ঘাটে বসে তাই পড়ছে পথিক 
মনে মনে উদ্বেগে !


ব‍্যাঙেদের গীতি প্রথমেই আছে
সমবেত লাখো কণ্ঠে 
ন‍্যাংটো পুচুরা ভিজবেই নেচে
পাড়ার নন্টে ফন্টে  !


শনফুলে মৌমাছিদের ওড়া
ব‍্যস্ত ডানায় থাকবেই
"বসে আঁকো" প্রতিযোগিতার ভিড়ে 
বাচ্চারা চ‍্যাঙ আঁকবেই ।


ব‍্যাঙ ব‍্যাঙাচির হ‍্যাংলামি কিছু 
তালিকায় আছে ধরা 
যদি ঠিক মত না ঝরে ঝোরা
ঘোষিত হবেই খরা !


মাখবেই কাদা স্কুলের শিশুরা
ভোলানাথ রমা বিশুরা
রেবেকা রহিম রমানাথ প্রিয়া
যোশেফ ডালিম যীশুরা ।


কবিদের কথা না লিখে চলেনা
ওটা তো লিখতে হবেই
ছন্দে গন্ধে জুঁইফুলি বেলা
প্রজাপতি কথা কবেই  !


টুকটাক কিছু অঘটন যা
ঘটবেই ভরা প্লাবনেই
সে ক্ষতির মতি পুশিয়ে দেবেই
বাইশের ভরা শ্রাবণেই ।

গল্প:

                 📚 প্রনব রুদ্র🔹মালদা🔹


📖 প্রচন্ড ঠান্ডা। ডিসেম্বর মাস। জাঁকিয়ে নেমেছে শীত। শরীরে ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে মিনার। পোদ্দারবাবুর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে সে। বয়স বড়ো জোওওর দশ এগারো হবে। কাল মধ্যরাত পার করে কাজ করতে হয়েছে তাকে। পোদ্দারবাবুর মেয়ের জন্মদিনের জমকালো পার্টি। প্রঅঅচুর লোক। সীমাহীন আনন্দ। বাবুর একমাত্র মেয়ে বলে কথা! নয়ে পা রাখলো সে। মিনার এই সাজানো বর্ণাঢ্য জন্মদিন ভালোই লেগেছে। কিন্তু উপভোগ করা হয়নি আনন্দ। নানান কাজের ফাঁকে অবসর মেলেনি তার। কাজশেষে তড়িঘড়ি উচ্ছিষ্ট দানাপানিতে পেটের আগুন নিভিয়ে রান্নাঘরের মেঝেতেই গুটিসুটি শুয়ে পড়েছিলো। শুতেই আরামেএএর ঘুম অলস স্বপ্ন ছূঁয়ে দেয় চোখের পাতা। কেক কেটে তারও জন্মদিন পালন হয় স্বপ্নে! পাঁচ ভাইবোন মিলে সাতজনের সংসার তাদের। সে-ই বড়ো। নুন আনতে পান্তা খতম হাড়ির হাল। অভাবের সাথে দারুণ ভাব। চরম বন্ধুত্ব। বাবা মা দিন মুজুরি শ্রমিক। আদতে কোনদিনই, জন্মদিন কবে তাই জানেনি সে। পালন তো বহুদূরের বাজনা!

 সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাজের স্রোতে ভেসে যায় - চা ক'রে ঘরে পৌঁছে দেওয়া, ঘর মোছা, গোছগাছ করা, জামাকাপড় কাচাসহ নানান কাজ।তাই শরীরের ব্যথার দিকে না তাকিয়ে কাজে এগোতে থাকে দিন।
 "এই শুনছিইইস, বলি তিথির টিফিনটা রেডি করলি? তাড়াতাড়ি দিয়ে যা"- মালকিনের ডাকে টিফিনবাক্সের প্যাঁচ আটকাতে আটকাতে দৌড়ে যায়। বাবুর মেয়ে স্কুলে যাবে তার টিফিন সাজিয়ে দেওয়াটাও মিনার প্রতিদিনেরই কাজ। বাবু মেয়েকে নিয়ে দামী গাড়ি চড়ে একেবারে অফিসের জন্য বের হন। একটুপরে প্রায় প্রতিদিনের মতো মালকিনও বের হন সমাজসেবার কি সব কাজে। বাড়ি ফাঁকা হলেও তার কাজের শেষ থাকে না। মালকিনের বলে যাওয়া নির্দেশে চলতেই থাকে কাজ। ছোট শরীরের পক্ষে নিতান্তই বেমানান সে সব অনেক কাজই। প্রতিদিনই এমন চলে রুটিনমাফিক টানা।

              আজ রবিবার। বাবুর বন্ধুরা বাড়ীতে এসেছেন। জম্পেস হাসি ঠাট্টা খানাপিনা চলছে। একটা উগ্র গন্ধযুক্ত গ্লাস এগিয়ে দেওয়ার সময় মিনা শুনতে পায় বাবুর এক বন্ধু বলছিলো " শিশুশ্রম নাকি সরকার আইন করে বন্ধ করেছে! চৌদ্দ বছরের নীচে কোন শিশুকে দিয়ে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করানো যাবে না। " বরফ টুকরোর বাটিটি এগিয়ে দিতে দিতে আরো শুনতে পায় ওই ভদ্রলোকটিই বলছে " কিরে বাসু তোর এই পুচকেটার বয়স কত? দেখে তো মনে হচ্ছে শিশু শ্রমিক।" বাবু হেসে বলেন "রাখ্ তোর আইন! কত দেখলাম ও সব। ওরা কাজ করলে খাবে কি? কে দেবে খেতে? আর ও যদি শিশু শ্রমিকও হয় তাতেই বা আমার কী? এই সব জাতহীন শ্রেণীর খবর কেইবা রাখে বল্? ছাড়্ তো সব ফালতু ট্রপিক। এনজয় দ্য টাইম। চিয়ার্স!" তারপর কুকুরের চিৎকারের মতো ঘরময় হাসির হিল্লোল ওঠে।

                 রাতে শুয়ে শুয়ে মিনা শোনা কথার প্রেক্ষিতে ভাবতে থাকে। সত্যিই তো কাজ না করলে কে তাকে খেতে দেবে? বাবা মা ভাই বোন নিয়ে ওদের অভাবে সংসারে খাবার জোটে না ঠিকমতো। কি করে বাচঁবে সে? কি করে বাঁচবে তার পরিজন? রাত বাড়তে থাকে। মিনার ভাবনারা গাঢ় হয়। এক সময় চোখে ঘুম নামে। ঘুম এক আশ্চর্য ওষুধ। বাস্তবে যা কিছু মেলে না ঘুম স্বপ্নে সব পুষিয়ে দেয়। কিন্তু এমনভাবে ভাবনার স্থায়ী সমাধান কি কিছু পায় মিনা?

            আজ কোন কিছু উপলক্ষ্যে বোধ হয় ছুটি ছিলো তাই বাবুদের বন্ধু বান্ধবীরা এসেছেন বাড়িতে। ছুটির কারণ মিনা জানে না। তার প্রয়োজনও হয় না। তার তো কোন ছুটি তেমনভাবে নেই। কবে যে সে একটু ছুটি পাবে! এতো অতিথি আসাতে বেশ কাজের চাপ। উনারা নিচুস্বরে নিজেদের মধ্যে কোন একটা কিছু নিয়ে আলোচনা করছেন। খাবার দাবারের প্লেট রাখতে গিয়ে ও শুনতে পায় কেউ একজন বলছেন "কিডনি লাগবে"।
খাওয়া দাওয়া চলে । শলা পরামর্শও চলে। শেষে একজন মিনাকে ডাকে। ব্যাগ থেকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বের করে বলে "মিনা চুপ করে বসো এখানে। আর ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকো।" মিনা হাত বাড়িয়ে বসে। আরো একজন ওর মুখের সামনে এসে হাতটা ধরে দাঁড়ায়। মিনা কিছু দেখতে পায় না। কিন্তু বুঝতে পারে ওর হাতের কনুয়ের উল্টোদিকে একটা পিঁপড়ের কামড়ের মতো লাগে। তারপরে সামনে দাঁড়ানো মহিলাটি মিনার কনুই ভাঁজ করে দেয় আর বলে "যাও এবার। একটু পরে ভাঁজটা আলগা করে দিও।" মিনা উঠে  চলে যায়। দরজার আড়াল থেকে দেখতে পায় দু'তিনটে ছোট কাঁচের টুকরোর উপর সিরিঞ্জ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ফেলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে  কি যেন দেখছেন প্রথমে ডাকা ওই মোটা মতন ভদ্রলোকটি। এরপর মুচকি হেসে বললেন "ঠিক আছে। চলবে। কাল নিয়ে আয়। আরো কিছু কাজ আছে। কালই ওগুলো সব করে নেব। বাসুর কোন চিন্তা নেই।" মিনা এসবের বিন্দু বির্সগ কিছুই বুঝতে পারে না। তার বোঝার কথাও নয়। 

                    মিনা এখন বেডে সংজ্ঞাহীন। তার বাড়িতে কোন খবর দেওয়া হয়নি। যদি সে মারাই যায় তবে তার লাশটা পাঠানো হবে। বাবু বলেছেন "কোন কাজ নেই শুধু শুধু গ্রামের মুর্খদের এনে।" তারপর হয়তো বাবু একটু দুঃখু দুঃখু করে বলবেন " মিনা খুব ভালো মেয়ে ছিলো। অসুখে মারা গেলো।" কি অসুখ, কি হয়েছিলো অতো বিস্তারিত কিছুর দরকার নেই। বেশ কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই হলো। ব্যস্। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ! সব ঠিক হয়ে যাবে আগের মতন। ওর বাড়ির কেউ বা বাইরের কেউ জানবেই না বাসুর মেয়ের জন্য কিডনি নেওয়া হয়েছে মিনার ছোট্ট শিশু শরীর থেকে। কে দেখবে এই সব? কে নেবে তার খোঁজ? 

           সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেই বোধ করি মিনা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুল পাখিদের সাথে। এখন তার ছুটি মিলেছে। হয়তো এই ছুটি অনন্তকালের জন্য। পরজন্ম যদি থাকে হতে পারে সেই পর্যন্তও সে খেলবে, ঘুরবে। কোন কাজ থাকবে না। থাকবে না এক ফোঁটা খিদে। মিনা খেলছে। শুধু একটা ব্যথা বুকের অনেকটা গভীরে বিঁধে থাকে। বাজে। কিসের ব্যথা সংজ্ঞাহীন নিষ্পাপ মুখে তা দেখা যায় না। ব্যথা কুঠারাঘাত করতে চায়। কে জানে মিনারা এই কাজে কতটা সফল হয়। দিন চলে যায়। দিন ফিরে আসে। দীন হাঁপায়। ব্যথা থাকে। আসলে ব্যথাটা এখানেই ছিলো। এখানেই থাকে। ব্যথা লেগে থাকে ঘড়ির কাঁটায় টিক্ টিক্...  টিক্ টিক্...
নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates